উপসচিব পদোন্নতির সুপারিশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের আপত্তি
প্রকাশিতঃ 11:13 am | February 21, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদনে বাস্তবতার নিরিখে প্রশাসনিক সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বর্তমানে উপসচিব পদের ৭৫ শতাংশ ওই সার্ভিসের জন্য সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উপসচিব পদে কমিশনের এমন সুপারিশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি এ সুপারিশকে আদালতের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছে।
জানা যায় সুপারিশে কমিশন বলেছে, সব সার্ভিসের সমতা বজায় রাখার স্বার্থে এবং জনপ্রশাসনের উচ্চতর পদে মেধাবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন প্রশাসনিক সার্ভিসের (প্রশাসন ক্যাডার) ৭৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টি অধিকতর যৌক্তিক মনে করছে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পদ অন্য সার্ভিসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনগত দিক পরীক্ষা করে দেখার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএএসএর সভাপতি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ বিষয়ে একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ১০ বছরব্যাপী সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আপিল বিভাগের রায় ও রিভিউ শেষে ২০১৬ সালে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয় এবং উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়। আপিল বিভাগ প্রশাসন ক্যাডারের প্রাসঙ্গিক কর্ম অভিজ্ঞতা ও ঐতিহাসিকভাবেই প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে উপসচিব পদটির সম্পর্ক বিবেচনায় উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদে প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত অধিকার আছে এবং অন্য ক্যাডারের সহজাত অধিকার নেই বলে ঘোষণা করে। সুতরাং, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এই মতামত উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অ্যাসোসিয়েশন আরও জানায়, উপসচিব প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ, তাই পদসোপান অনুযায়ী উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারকে শতভাগ পদোন্নতি না দিয়ে এর পরিবর্তে পার্শ্ব-নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, যা যৌক্তিক নয়।
এদিকে, সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস পুনর্গঠন প্রস্তাবে প্রস্তাবিত সার্ভিসগুলোতে অন্তর্ভুক্ত না করায় সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি এক প্রতিবাদলিপিতে জানায়, কমিশনের প্রতিবেদনে বিদ্যমান সিভিল সার্ভিসগুলোকে পুনর্বিন্যাস করে বিভিন্ন সার্ভিস ও এর কাঠামো পুনর্গঠনের প্রস্তাব করা হলেও একমাত্র বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারকে পুনর্গঠিত সার্ভিসগুলোর প্রস্তাবে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করা হয়েছে। দাখিল করা সংস্কার প্রস্তাবে ১৯৮০ সালে সৃজিত গুরুত্বপূর্ণ পেশাভিত্তিক এ ক্যাডার সার্ভিসকে ‘অস্তিত্বহীন’ করার মতো অদূরদর্শী সুপারিশ আমাদের অত্যন্ত বিস্মিত ও ব্যথিত করেছে। সব বৈষম্য নিরসন ও গতিশীল জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টা এবং ছাত্রজনতার বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে এ সুপারিশ সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
কালের আলো/এমএএইচ