মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের পুনর্মিলনে স্মৃতির সন্তরণ, দেশসেবায় আত্মনিয়োগের অনুরোধ সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 10:15 pm | February 21, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের সবুজ ক্যাম্পাসে রূপময় নিসর্গ ছুঁয়েছে বসন্ত। যান্ত্রিকতার কোলাহলমুখর অতি কর্মব্যস্ত জীবনে ঋতুরাজের দোলায় ভেসে সবাই ছুটে এসেছেন নিজের প্রিয় ক্যাম্পাসে, নাড়ির টান আর বন্ধুদের ভালোবাসার টানে। দূর থেকে নাম ধরে ডাক দিচ্ছেন একজন আরেকজনকে। পেছন ফিরে তাকাতেই হাসিতে ঝলমল একেকজনের মুখ। যে বা যারা নাম ধরে ডাকলো যে-সেও পুরোনো আলিঙ্গন পেতে দুহাত প্রসারিত করে উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে। কাছাকাছি হতেই একে অপরকে জড়িয়ে ভুলে যায় প্রিয় বন্ধুর দীর্ঘদিনের না পাওয়া উষ্ণ আলিঙ্গন সুখ। খোঁজ নিয়েছেন বর্তমান হালহকিকতের।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেটদের সংগঠন ‘মির্জাপুর এক্স-ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন’ (মেকা) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ১৪তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে একবার-প্রতিবার। চোখের কোনে আনন্দ অশ্রু নিয়ে দীর্ঘদিনের সঙ্গী ও পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে সবাই মেতেছেন খোশগল্পে। হাসি-ঠাট্টা, স্মৃতিচারণ, আড্ডা, বাড়তি বাড়তি উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনায়। ক্যাডেট কলেজ প্রাঙ্গণ জুড়ে ছিলো বন্ধুদের দেখা পেয়ে আবেগ-অনুভুতি সমৃদ্ধ বাক্যের ছড়াছড়ি। দুরন্ত সময়কার সোনালী স্মৃতিগুলোই আজীবনের জমানো সুখ।
মির্জাপুর এক্স-ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন’ (মেকা) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ১৪তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনটি হয়ে ওঠে অনাবিল আনন্দে মুখর। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে উঠে অধ্যয়নরত-পুরোনোদের মিলনমেলায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। অনুষ্ঠানের ‘মধ্যমণি’ প্রধান অতিথি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে যোগ হয় বাড়তি মাত্রা। বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি। খোলা জিপে বর্তমান ও পুরোনো শিক্ষার্থীদের বর্ণাঢ্য পুনর্মিলনী প্যারেডের সালাম গ্রহণ করেন। পরে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান দেশ ও জাতি গঠনে ক্যাডেটদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। এখান থেকে সবাই ভালো মানুষ হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে বেরিয়ে যান।’ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ক্যাডেটদের সার্বিক সফলতা ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি চর্চা, নৈতিকতা ধরে রাখা এবং নিজেদের মধ্যে দেশপ্রেমের স্পৃহা বজায় রাখার মাধ্যমে তাঁদেরকে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে অনুরোধ জানান।
এর আগে সেনাপ্রধান ক্যাডেট কলেজে এসে পৌঁছালে নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মঈন খান, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল এস এম ফয়সলসহ অন্যরা তাকে স্বাগত জানান। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মাসুদুর রহমানসহ মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেট, স্থানীয় ফরমেশনের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুনর্মিলনী মানেই এক অন্যরকম উত্তেজনা যেখানে জড়িয়ে থাকে হাজারো স্মৃতি ও আনন্দ। তারুণ্যদীপ্ত অতীতের সোনালি দিনগুলোতে ফিরে যান প্রত্যেকে। অগ্রজদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেন অনুজরা। আড্ডায়-গল্পে সোনালি দিনের স্মৃতি রোমন্থনে সময় পার করেছেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি। কালের আলো’র সঙ্গে আনন্দোচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজ খুব ভালো লাগছে, এতোদিন পরে সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে। স্মৃতিতে ভাসছে সেই পুরোনো অতীত, ক্যাডেট জীবনের সেই দিনগুলির কথা। সুযোগ হয়েছে পরস্পরের মধ্যে এই মেলবন্ধনের।’
প্রাক্তন ক্যাডেটদের সংগঠন ‘মির্জাপুর এক্স-ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন’ (মেকা) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ১৪তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের শেষ দিন শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি)। বিদায় নিতে নিতে যেন সবার হৃদয়ে হৃদয়ে নীরবে বাজবে সেই গান ‘দেখা হবে, বন্ধু, কারণে আর অকারণে/দেখা হবে, বন্ধু চাঁপা কোনো অভিমানে…।’
কালের আলো/এমএএএমকে