গ্রাম-শহরের পার্থক্য কমিয়ে আনার সুপারিশ কমিশনের

প্রকাশিতঃ 4:21 pm | February 22, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আগামী ১০ বছরের মধ্যে স্থানীয় সরকারের স্তর সংখ্যা হ্রাস করে গ্রাম-শহরের পার্থক্য কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সারসংক্ষেপ থেকে এ তথ্য প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

সার-সংক্ষেপে বলা হয়, পুরো দেশে দ্রুত নগরায়ণের ফলে নগর সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং গ্রামীণ এলাকা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। তাছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ (ভৌত ও ভার্চু্যয়াল) ব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারমান, ফলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে স্থানীয় সরকারের স্তর সংখ্যা হ্রাস করে গ্রামীণ ও নগরীয় ব্যবস্থার বিভাজন দূর করে সমজাতীয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা ও অধ্যয়ন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ সরকারকে বিশেষায়িত পরামর্শ দিতে সক্ষম হবে।

এতে আরও বলা হয়, দেশে তিন স্তর বিশিষ্ট গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিদ্যমান। এই তিন স্তর বিশিষ্ট গ্রামীণ স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ এবং নগর স্থানীয় সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩০টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি কর্পোরেশন চলমান রয়েছে। এ সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইন ও সাংগঠনিক কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনটি গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জেলা পরিষদের কার্য ও কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তনের সুপারিশ করা হবে। জেলা পরিষদ হবে একটি বিকেন্দ্রীকরণ পরিকল্পনা ইউনিট। ডেপুটি কমিশনারের অফিস পৃথকভাবে জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় নিয়জিত থাকবে। জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জেলার সকল উন্নয়ন সংক্রান্ত দপ্তরগুলো জেলা পরিষদে ন্যস্ত হবে। যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদায়িত হবেন।

একই ভাবে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন দপ্তরগুলোতে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের কার্যাদি এবং অর্থ-সম্পদ পরিষদে ন্যস্ত হবে।

সার-সংক্ষেপে বলা হয়, বিদ্যমান গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামোগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইউনিয়ন পরিষদে ওয়ার্ড ব্যবস্থা রয়েছে, উপজেলায় একই নির্বাচনী এলাকা থেকে চেয়ারম্যান ও দুই জন ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জেলা পরিষদে সরাসরি কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তিনটি স্তরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের গঠন প্রকৃতি, নির্বাচন, দায়িত্ব বণ্টন, কর আদায় ও কেন্দ্রের অর্থায়ন এবং আন্ত-প্রতিষ্ঠান সম্পর্ক ভিন্ন ভিন্ন বিধায় এগুলোর ব্যাপক আইনগত, সাংগঠনিক, কাঠামোগত, সেবা ও শাসনকাঠামোতে বিস্তর পরিবর্তন প্রয়োজন।

ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের আইন কাঠামো, সংগঠনিক কাঠামো ও নির্বাচন ব্যবস্থা অসম পদ্ধতিতে বিন্যস্থ। এটিকে একটি সমজাতীয় পদ্ধতিতে পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশের জাতীয় সরকারের আদলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্গঠন, নির্বাচন ও কার্যপদ্ধতি পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন হবে। এ লক্ষ্যে কমিশন কিছু নতুন পদ্ধতি/পন্থা অবলম্বন করছে।

এ পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন ব্যবস্থা সহজ, ব্যয় সাশ্রয়ী, সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ, তৃণমূলে গণতান্ত্রিক ও গঠনমূলক নীতিবিতর্ক করার ইতিবাচক একটি ব্যবস্থার বিকাশ হতে পারে।

প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নতুন পদ্ধতির অধীনে নিম্নলিখিত তিনটি নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মনে করে সংষ্কার কমিশন।

সেগুলো হলো- 

ক. বর্তমানে, ১৯৬০-এর দশকের (পাকিস্তান আমলের) জেনারেল আইয়ুব খান প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার আদলের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে।

খ. তিনটি পৃথক আইনের বদলে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদকে একটি একক আইনের অধীনে আনা হবে। একইভাবে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনগুলোকে ভিন্ন একটি একক আইনের অধীনে আনা হবে। বর্তমানে বিরাজিত পাঁচটি পৃথক আইনের স্থলে সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুটি মৌলিক আইনের অধীনে আসা যেতে পারে।

গ. নতুন আইনের অধীনে একই তফসিলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অধীনে আনায়নের সুপারিশ করা হবে। এ নির্বাচন সরকার এবং প্রার্থী উভয়ের দিক থেকে ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী হবে।

কালের আলো/এমডিএইচ