ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি বদলে হতভম্ব জার্মানি

প্রকাশিতঃ 5:30 pm | February 22, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বিশ্বরাজনীতিতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে ট্রাম্পের তড়িৎ পদক্ষেপে বেকায়দায় জার্মানি।

গত সপ্তাহে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত সিকিউরিটি কনফারেন্সে জার্মান রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। জার্মানির রাজনীতিবিদদের দেশটির কট্টর ডানপন্থী দল এএফডিকে পাশে সরিয়ে না রেখে সহযোগিতা করার কথাও বলেছেনন তিনি।

এর কয়েক দিন পর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আলোচনায় বসলেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ইউক্রেন যুদ্ধ বিষয়ে এই আলোচনার টেবিলে ইউরোপের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।

এদিকে ইউক্রেনকে সহায়তা করার বিনিময়ে দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ চেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার ঢংয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলেও আখ্যায়িত করেন।

দেশটিতে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জনান তিনি। সেই সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর জন্য তিনি জেলেনস্কিকে দায়ী করেন।

হতভম্ব বার্লিন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন নীতি বদলে অনেকটাই যেন হতভম্ব বার্লিন। দেশটির রাজনীতিবিদদের কথায়ও নিজেদের হতবিহ্বল পরিস্থিতির আঁচ মিলেছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেয়ার স্পিগেলকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলা ভুল ও বিপজ্জনক।’

দেশটির ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হাবেক ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সত্য বিকৃতি করার অভিযোগ তোলেন। সংবাদমাধ্যম এআরডিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাবেক বলেন, ‘তিনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) হঠাৎ বলছেন, ইউক্রেন রাশিয়ায় হামলা করেছে, বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।’

এদিকে জার্মানির আরেক বৃহৎ রাজনৈতিক দল সিডিইউর প্রধান ফ্রিড্রিশ ম্যার্ৎসের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেই মনোভাব নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধটিকে দেখছেন তা আসলে রাশিয়ার মতোই। সত্যি বলতে, আমি হতভম্ব, রাশিয়ার এই বয়ানকে ট্রাম্প ধারণ করেছেন।

উল্লেখ্য, ২৩ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে করা জনমত জরিপে এগিয়ে আছে সিডিইউ। সেই হিসেবে দেশটির পরবর্তী চ্যান্সেলর হতে পারেন ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস, ধারণা বিশ্লেষকদের। আর এমনটা হলে আগামী বছরগুলোতে মার্কিন-জার্মান সম্পর্কে জার্মানির পক্ষ থেকে ম্যার্ৎসকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

এ ছাড়া জার্মান রাজনীতিবিদরে এমন মন্তব্য নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও। জার্মান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হেনিং হফ বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বার্লিন হতভম্ব ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি হলো, তিনি (ট্রাম্প) ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিপরীত দিকে অবস্থান নিয়েছেন, যা অবশ্যই আশ্চর্য হওয়ার মতো। তবে ট্রাম্পের বেলায় বিষয়টি অপ্রত্যাশিত নয়।’

ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের ভিত্তি নড়বড়ে

পরিস্থিতি বলছে, কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্প ও তার সরকারের কর্তাব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির সম্পর্কের যেই সাধারণ ভিত্তি ছিল তা নড়বড়ে করে দিচ্ছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন—উভয়ই নিজেকে রক্ষায় ইউক্রেনকে যুদ্ধের জন্য যতদিন প্রয়োজন সহযোগিতা দিয়ে যেতে একমত ছিলেন। রাশিয়ার আগ্রাসী ভূমিকার বিষয়ে কোনো দ্বিমত ছিল না তাদের। এমনকি জেলেনস্কির গণতান্ত্রিক বৈধতার বিষয়েও তাদের ভিন্নমত ছিল না।

তাদের বিশ্বাস ছিল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেন শুধু নিজেকে রক্ষা করছে না বরং ইউরোপেকেও রক্ষা করছে। ট্রাম্পের আমলে পারস্পরিক এই বোঝাপড়ার কোনো সুযোগ নেই।

কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে জার্মানি।

সিডিইউর প্রধান ম্যার্ৎস ও এসপিডির প্রধান শোলজ—উভয়ই ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন চালিয়ে যেতে চান। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যার্ৎস বলেন, ‘এটি এখন গুরুত্বপূর্ণ, ইউরোপীয়রা খুব দ্রুত একটি সাধারণ কৌশলের বিষয়ে একমত হবেন। আলোচনা টেবিলে জায়গা পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ না করে ইউরোপকে নিজেদের কৌশল তৈরি করতে হবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক হেনিং হফের মতে, ‘জার্মানির পরবর্তী সরকারের উচিত হবে নিজেদের সামর্থ্য বাড়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউরোপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন সামর্থ্যের দিক থেকে কোনো ঘাটতি তৈরি হলে তা কাটাতে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করা। বিষয়টি কঠিন হবে, তবে আমাদের উচিত হবে অন্তত নিজেদের ও মিত্রদের পথের অন্তরায় না হওয়া।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন নীতি বদলে নির্বাচনের আগে জার্মানির সিডিইউ ও এসপিডি পরস্পরের কাছে আসছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই দুই দলই একমত, ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনার জন্য জার্মানির নিখুঁত কৌশল প্রয়োজন।

কালের আলো/এসএকে