পদ্মার পাড়ে ক্যাডেটদের মিলনমেলায় উচ্ছ্বল তারুণ্যভরা দিন, ক্যাডেটদের সার্বিক সফলতা কামনা সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 10:10 pm | February 22, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়/ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।/আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।/মোরা সুখে দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।’ রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের অঙ্গনজুড়ে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যেন সবার হৃদয়ে হৃদয়ে নীরবে বেজেছে কবি গুরুর গানের এই কথাগুলো। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেটদের সংগঠন ‘ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেটস অ্যাসোসিয়েশান’ (অরকা) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ১৪তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে সাবেক ক্যাডেটরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন পুরনো দিনের স্মৃতিতে। এই উৎসব ঘিরে সবুজ চত্বরে বসে নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। কয়েক মুহুর্তের জন্য সবাই যেন ফিরে যান উচ্ছ্বল তারুণ্যভরা সোনালী দিনে। যেখানে মরচে ধরেনি বন্ধুতায়। জীবনের এই সময়টিতে বন্ধুতার বন্ধন ঝালিয়ে নিলেন আরও একবার।
ক্যাডেট কলেজের প্রাঙ্গনের এপাশ-ওপাশে প্রাক্তনদের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছিল অজস্র আবেগি সংলাপ। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই ভিড়-বুনো উল্লাস। ক্যাডেট জীবনের স্বর্ণময় দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থনে হাতে হাত আর বুকে বুক মিলিয়ে করেছেন কুশলবিনিময়। সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশে চলছে ক্লিক ক্লিক, দেদারসে উঠছে সেলফি-ছবি। ফেলে আসা ক্লাসরুম, শিক্ষক আর হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা মিলে হুড়মুড়িয়ে বইতে থাকে গল্পের স্রোত।
‘ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেটস অ্যাসোসিয়েশান’ (অরকা) আয়োজিত পুনর্মিলনী উৎসব যেন সূত্রপাত করে কার্যত এক মহামিলনের। যেখানে আবেগ-বাস্তবতার সিক্যুয়েন্সে সাবেক ও বর্তমান ক্যাডেটদের সামনে এগিয়ে চলার শক্তি আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বর্ণাঢ্য পুনর্মিলনী প্যারেডের সালাম গ্রহণ করেন। পরে প্রধান অতিথি হিসেবে প্যারেডে অংশগ্রহণকারী বর্তমান ও প্রাক্তন ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
অসংখ্য মেধাবী তরুণকে জাতি গঠনে সুনিপুণ কারিগর হিসেবে তৈরি করেছে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ। এই ক্যাডেট কলেজের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও ভাতৃত্ববোধ তৈরি করবে বলে মনে করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। একুশের চেতনা বুকে লালন করে মাতৃভাষায় আবেগ উচ্ছ্বসিত প্রাণে গৌরব ও আত্মত্যাগের ভাষার মাসে সেনাপ্রধান শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করেন ভাষা শহীদদের। গভীর শ্রদ্ধায় তিনি স্মরণ করেন ৩০ লাখ শহীদকে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি দেশ ও জাতি গঠনে ক্যাডেটদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। ক্যাডেটদের সার্বিক সফলতা ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। তাদের দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতেও অনুরোধ জানান।
দেশ-বিদেশে আলো ছড়াচ্ছেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে জাতির উন্নয়নে রেখে চলেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ক্যাডেট জীবনে অসামান্য সৃজনশীল এক সময় পার করেছেন তাঁরা। অরকা’র আয়োজনে পুনর্মিলনীতে যোগ দিয়ে তাঁরা দেখিয়ে দিলেন বয়স যত বাড়ে, তাদের তারুণ্য তত বাড়ছে। যৌবনের শক্তি, কাজের প্রেরণা ধরে রেখে প্রচলিত ধারণাকে ম্লান করে দিতে চান তাঁরা। নিজেদের মধ্যকার মৈত্রী ও সম্প্রীতিকে আরও সুসংহত করতে চান। ফলত ঐক্য আর ভাতৃত্বের নতুন বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন নিজেদের। অনেকেই অনেক সহপাঠী হারিয়েছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কার কখন ডাক আসে ঠিক নেই। এমন একটি পর্যায়ে এই সম্মিলন প্রত্যেকের কাছে সঞ্জীবনীর মতো, বলছিলেন সাবেক ক্যাডেটদের কেউ কেউ।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ‘ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন’ (ওআরসিএ) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী জমকালো ১৪তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে এসে পৌঁছালে ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান, কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল কবীর ও ‘ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবীর তালুকদার এবং অন্যান্য অতিথিরা তাকে অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেট, স্থানীয় ফরমেশনের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক এবং ক্যাডেটরা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে