নৌবাহিনীর ঘরে ওদের যেন স্বর্গ সুখের আনন্দ

প্রকাশিতঃ 11:27 pm | February 22, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

ইতিহাসের ভয়াবহ বন্যায় তছনছ হয়ে যায় ফেনী সদর ও ফুলগাজী উপজেলা। বুক সমান পানি জমে ঘর-বসতিতে। ঘর-বাড়ি হারিয়ে নি:স্ব হয় অনেকেই। বিপদগ্রস্ত এসব মানুষের তাৎক্ষণিক সহায়তায় এগিয়ে আসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ত্রাণসামগ্রী, বিশুদ্ধ খাবার পানি, আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার, বস্ত্র সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে তাঁরা তাদের পাশে দাঁড়ায়। দীর্ঘমেয়াদে এসব কূলহারা মানুষের পুনর্বাসনেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে নৌবাহিনী। ঘরদোর হারিয়ে আত্মীয় স্বজনের ঘরে কিংবা খোলা আকাশের নিচে বাস করতে হয়েছে অনেককেই। অবশেষে তাদের সেই দু:খগাঁথা দূর করে প্রশান্তির হাসি ফুটিয়েছে তাঁরাই।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব অসহায় ও ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের নতুন পথের দিশা দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। তাঁরাই দিয়েছে মাথাগোঁজার শান্তি। নিজেদের উদ্যোগে নতুনভাবে নির্মিত ৮৫টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে তাদের কাছে। নতুন ঘরের বারান্দায় যেন এখন স্বর্গ সুখের আনন্দ ওদের। জলেভাসা পদ্মের মতো সেই জীবন আজ খুঁজে পেয়েছে প্রকৃত জীবনের মানে। এমন হাসিমাখা, আনন্দমুখর মুখ স্বভাবতই তৃপ্ত করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ সংঘের প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সুলতানা ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসানকে। নাদিয়া সুলতানার উদ্যোগ ও এডমিরাল এম নাজমুল হাসান এর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় নির্মিত এসব বাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সীমাহীন দু:খের সময় পেরিয়ে জীবনে দিয়েছে নিশ্চয়তা, স্বস্তি ও পরম আনন্দ। এর আগেই বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফেনী জেলার সদর ও ফুলগাজী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, এতিমখানা ও মন্দিরসহ ৩৯টি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার্য বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রী বিতরণ করেছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী নবনির্মিত ৮৫টি বাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। মানুষের করুণা ও দয়ার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকার জীবনের অবসান ঘটায় নতুন ঘর পাওয়া এসব লোকজন শুধুমাত্র নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ সংঘের প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সুলতানা ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশই নয়, তাদের জন্য প্রাণ খুলে দু’হাত তুলে প্রার্থনাও করেছেন।

ঘরসহ সব কিছু পাওয়ার আনন্দে ওদের প্রত্যেকের চোখে মুখে আনন্দের হাসি। ঘর পেয়ে কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করায় একজন বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ঘর ছিল। ভয়াবহ বন্যা কেড়ে নিয়েছে সব। স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে, আমরা একখানা নতুন ঘর পাবো। এই বয়সে এত সুন্দর ঘরে থাকতে পারবো। আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। দোয়া করবো যতদিন বেঁচে থাকবো নৌবাহিনীসহ সবার জন্য।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গত বছরের ২১ আগস্ট প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবেশের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর ফেনীসহ কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ ও আকস্মিক এই প্লাবনে বাড়ি-ঘর, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ সম্পূর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। বন্যা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ সংঘের উদ্যোগে এবং নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ফেনী জেলার সদর ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বাড়ি নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। বন্যায় বাড়ি-ঘর হারিয়ে আশ্রয়হীন ও অসহায় মানুষদের নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা করে দিতে গত বছরের ৯ অক্টোবর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়। নবনির্মিত বাড়িগুলো বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের মতো বন্যা প্রবণ এলাকায় খুবই উপযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেড় তলা বিশিষ্ট এই বাড়িগুলোতে বন্যাকালে পানিবন্দি মানুষদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ বাড়িতেই নিরাপদে অবস্থান করার সুবিধা রয়েছে।

শুধু তাই নয়, বন্যার মহাদুর্যোগকালীন সময়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের আওতায় নৌবাহিনী উদ্ধারকারী দল পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানোর পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী, বিশুদ্ধ খাবার পানি, আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার, বস্ত্র সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করে। বন্যা দুর্গত এলাকায় ৩৫ শয্যা বিশিষ্ট ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল টিম বন্যার্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।

কালের আলো/এমএএএমকে