গ্যাংস সংকট কাটিয়ে ১৩ মাস পর উৎপাদনে যমুনা সার কারখানা

প্রকাশিতঃ 12:31 pm | February 24, 2025

জামালপুর প্রতিবেদক, কালের আলো:

জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানায় ১৩ মাস সার উৎপাদন বন্ধ থাকার পর পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে এ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘তিতাস গ্যাস সরবরাহ না করায় ১৩ মাস সার উৎপাদন বন্ধ ছিল। পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করায় গতকাল রবিবার সন্ধ্যা থেকে কারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৩ মাস কারখানায় বন্ধ থাকায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

কারখানা সূত্রে জানা গেছে, যমুনা সার কারখানায় নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২ থেকে ৪৩ পিএসআই গ্যাসের চাপের প্রয়োজন হয়। কিন্তু গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাস সংকটের কারণে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ দিতে না পারায় গত বছরের ১৫ জানুয়ারি সার উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে করে বেকার হয়ে পড়েন কারখানাসংশ্লিষ্ট শ্রমিক, কর্মচারী, পরিবহনের মালিক, চালক, কর্মচারী, কারখানার আশপাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল, রেস্টুরেন্টের মালিকরা।

কারখানা বন্ধ থাকাকালীন সময়ে দেশের বাইরে থেকে আমদানি করে ও দেশের অভ্যন্তরের অন্য সার কারখানায় উৎপাদিত ইউরিয়া সার ডিলারদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো। তবে কৃষকদের মাঝে এসব সারের চাহিদা কম থাকায় ডিলাররা পড়েন বিপাকে। গত এক বছরে কারখানাটি চালুর দাবিতে বেশ কয়েক দফা বিক্ষোভ ও আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন কারখানাসংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও স্থানীয়রা। দৈনিক ১৭০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে ১৯৯১ সালে কারখানাটি যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) তালিকাভুক্ত ১৯০০ ডিলারের মাধ্যমে জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, উত্তরাঞ্চলের কমান্ড এরিয়াসহ ২১টি জেলার ১৬২ উপজেলায় কৃষকদের কাছে কারখানাটি সার সরবরাহ করে আসছিল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে গ্যাসের চাপের স্বল্পতা এবং কারখানার বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটির কারণে সার উৎপাদন নেমে আসে দৈনিক ১২০০ মেট্রিক টনে। দীর্ঘ ১৩ মাস পর আবারও কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এরপর থেকেই কারখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে।

যমুনা সার কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় এ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ খুশি হয়েছে। আমরাও গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় সার আমদানিনির্ভরতা থেকে সরে দেশীয় শিল্পকে সচল রাখলে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।’

উল্লেখ্য, যমুনা সার কারখানা প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম এত দীর্ঘ সময় ধরে বৃহৎ এই কারখানাটি বন্ধ ছিল। সর্বশেষ কারখানাটি ২০২৩ সালে একটানা ৭২ দিন বন্ধ থাকার পর ওই বছরের ১৭ নভেম্বর চালু হয়েছিল। কিন্তু উৎপাদনে থাকা অবস্থায় ৬০ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি গ্যাস সংকটে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

কালের আলো/এমডিএইচ