সরকারের কিছু ব্যক্তির বক্তব্যে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে: তারেক রহমান
প্রকাশিতঃ 8:58 pm | February 25, 2025

কুমিল্লা প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা অস্থিরতা দেখতে চাই না। বাংলাদেশে বহু অস্থিরতা হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার সরকার দেশের অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রত্যেকটি রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিয়ে গেছে। আমরা চাই এখন দেশ গঠন করতে। স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে। কারণ দেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয় দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন যদি আমাদের ঘটাতে হয় তাহলে অবশ্যই দেশে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা লক্ষ করছি অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু ব্যক্তির বক্তব্যে বিভিন্ন রকম অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখছি অর্থনীতিতে অস্থির অবস্থা, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভিন্ন অস্থিতিশীলতা। আমরা দেখছি প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অস্থিতিশীলতা। আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা চাই সরকার স্মুথলি (মসৃণভাবে) যত সুন্দরভাবে এই সরকার একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে, আগামী দিনে গণতান্ত্রিক যাত্রা তত স্মুথ হবে। আমরা আশা করবো, সরকারের প্রতি মানুষের যে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা, সে নিরপেক্ষতা তারা বজায় রাখবেন।’
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কুমিল্লার টাউন হল মাঠে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কমিটিতে নির্বাচিতদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয়, কারা সুবিধাপ্রাপ্ত হবে? কাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে? এটি আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে যদি আমরা গণতন্ত্রের ভিত্তি রচনা করতে পারি, গণতন্ত্রের চর্চাকে অব্যাহত রাখতে পারি তাহলেই দেশকে ও মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। আমরা যত বেশি দেশে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখতে পারবো- দেশে ততই মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবো। তত বেশি আমরা দেশ ও দেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘দেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্থিরতা লক্ষ করছি। অন্তর্বর্তী সরকারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জনগণের মাঝে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলে এসেছি সরকারকে সমর্থন করতে। আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক। কারণ বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন সেই কাজগুলো তারা করবে। সে অধিকার; যে অধিকার বহু বছর আগে পলাতক স্বৈরাচার রাতের আঁধারে অস্ত্রের মুখে লুণ্ঠন করে নিয়ে গিয়েছিল। এই অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু কিছু দিন ধরে দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, সরকারের ভেতরে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন রকম কথা বলছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যেহেতু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক বিশ্বে একটি রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা যদি সফল করতে হয়, তাহলে সবচাইতে উত্তম পন্থা হচ্ছে ভোটের মাধ্যমে, জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের মাধ্যমে সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা। একজন কৃষক কৃষিকাজ করবেন, শিক্ষক শিক্ষকতা করেন, সাংবাদিক সাংবাদিকতা করেন, ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দেন। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কাছে ভোট চাওয়া, নির্বাচন করা ও নির্বাচন চাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা দেখছি কিছু সংখ্যক লোক বা সংগঠন হঠাৎ বলছে বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। বিএনপি নির্বাচন ছাড়া কিছু বোঝে না। বিএনপি তো একটি রাজনৈতিক দল। আমরা যেহেতু জনগণের শাসনে বিশ্বাস করি, জনগণের রাজনৈতিক শক্তিতে, গণতন্ত্রে, ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, স্বাভাবিকভাবে আমরা ভোট বা নির্বাচন চাইবো। জনগণের কাছে ভোট চাইবো। দেশের মধ্যে নির্বাচন চাইবো। এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। একটি স্বাভাবিক ব্যাপারকে কেন কিছু লোক অস্বাভাবিকে পরিণত করতে চাইছে সেটি আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবে। এখানে কি কারও অন্য কোনও লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে।’
সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। আরও বক্তব্য রাখেন দলের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বিএনপির কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম ও কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এদিকে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি পদে উদবাতুল বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক পদে ইউসুফ মোল্লা টিপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাজিউর রহমান রাজিব নির্বাচিত হন।
কালের আলো/এমডিএইচ