ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় গ্রিন ক্লাস্টারের এসি বাস পরিষেবা উদ্বোধন

প্রকাশিতঃ 9:15 pm | February 25, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিক ও সুশৃঙ্খল করার জন্য ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় গ্রিন ক্লাস্টারের ২১নং (সংশোধিত) রুটে পরীক্ষামূলকভাবে এসি বাস পরিষেবা চালু করা হয়েছে। যার পথ দূরত্ব প্রায় ৩১ কিলোমিটার। রুটটি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে শ্যামলী, কলাবাগান, সাইন্স ল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান, হানিফ ফ্লাইওভার, কাজলা, সাইনবোর্ড হয়ে নারায়নগঞ্জের চাষাড়া পর্যন্ত যাবে।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এই পরিষেবা উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার।

সিনিয়র সচিব মো. এহসানুল হক বলেন, গণপরিবহন একটি শহরের মেরুদন্ড। এটি শুধু যাত্রীদের জন্য নয়, শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত কয়েক বছরে ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। যানজট, পুরানো বাস, অব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই পরিস্থিতিতে আমরা ঢাকা নগর পরিবহনের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। ২১নং (সংশোধিত) রুটে এসি বাস পরিষেবা চালু করা আমাদের সেই লক্ষেরই একটি অংশ।

তিনি আরও বলেন, এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো অত্যাধুনিক, আরামদায়ক এবং যাত্রীবান্ধব হবে। যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা হবে। আমরা আশা করি, এই পরিষেবা যাত্রীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হবে এবং তারা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।

সরকার পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে উন্নত যাত্রীসেবা প্রদানের লক্ষে ৫০০টি বৈদ্যুতিক বাস নামাতে যাচ্ছে উল্লেখ করে মো. এহসানুল হক বলেন, গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও আরও উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যে রয়েছে-

১। প্রতিটি রুটে একক কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা ব্যবস্থা চালু করা। এর ফলে যাত্রীরা একটি সুসংহত এবং নির্ভরযোগ্য সেবা পাবেন।

২। ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করা এবং পর্যায়ক্রমে বাসে র‍্যাপিড পাসের মাধ্যমে ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এর মাধ্যমে যাত্রীরা সহজেই টিকিট কিনতে পারবে ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা বন্ধ হবে।

৩। বৈদ্যুতিক বাস প্রবর্তন করা। এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানো এবং জ্বালানি দক্ষতা বাড়বে।

৪। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের জন্য প্রবেশগম্য গণপরিবহন নিশ্চিত করা।

ডিটিসি’র নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ঢাকা নগর পরিবহনের মাধ্যমে আমরা একটি আধুনিক ও টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকায় যেভাবে বাস সেবা পরিচালিত হচ্ছে, তা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে বাস মালিকগণ দৈনিক চুক্তিভিত্তিতে বাস চালক ও হেল্পারের কাছে বাস দিয়ে দিচ্ছে। এই বাসগুলো অধিক যাত্রী পাওয়ার আশায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। রাস্তা আটকিয়ে রেখে যাত্রী উঠাচ্ছে-নামাচ্ছে। বাসের প্রতিযোগিতার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এই ব্যবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমরা একটি রুটে একক কোম্পানি ব্যতীত ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিসে বাস অপারেশনের অনুমতি দেবো না।

ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিসে অবশ্যই নির্দিষ্ট স্টপেজ ব্যতীত কোথাও যাত্রী উঠানামা করা যাবে না জানিয়ে নীলিমা আখতার বলেন, স্টপেজ ছাড়া যাত্রা পথের সর্বত্র বাসের গেট বন্ধ থাকবে। কাউন্টার থেকে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করতে হবে, এর বাইরে কোথাও অর্থের লেনদেন হবে না। আমরা নগর পরিবহনের বাসে পর্যায়ক্রমে বাস ভেলিডেটর সংযোজন ও র‍্যাপিড পাসের মাধ্যমে সমন্বিত টিকেটিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাই। যাতে একই কার্ডের মাধ্যমে মেট্রোরেল ও বাসে চলাচল করতে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন, বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন, বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম প্রমুখ।

কালের আলো/এমডিএইচ