ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে এআই পরিষেবা বিক্রি, মাইক্রোসফট কর্মীদের প্রতিবাদ

প্রকাশিতঃ 12:05 pm | February 26, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এআই) এবং ক্লাউড পরিষেবা বিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে মাইক্রোসফট কর্মীরা। এর জেরে কম্পানির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠক থেকে পাঁচজন মাইক্রোসফট কর্মচারীকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একটি তদন্তে বিষয়টি সামনে আসে। এই তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সোমবার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা এবং লেবাননে সাম্প্রতিক যুদ্ধের সময় বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্বাচনের জন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মাইক্রোসফট এবং ওপেনএআই-এর অত্যাধুনিক এআই মডেল ব্যবহার করেছিল।
ওই প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে একটি ভুল ইসরায়েলি বিমান হামলার বিবরণও দেওয়া হয়েছিল। যেখানে একটি লেবানিজ পরিবারের সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়িতে আঘাত হানা হয়েছিল, যার ফলে তিন তরুণী এবং তাদের দাদী নিহত হয়েছিল।

মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা ওয়াশিংটনের রেডমন্ড শহরে কম্পানির কর্পোরেট অফিসে কর্মচারীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে নতুন পণ্য সম্পর্কে কথা বলছিলেন।

তার ঠিক ডানদিকে প্রায় ১৫ ফুট দূরত্বে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন কর্মী। তাদের কিছু টি-শার্ট ছিল। সেই টি-শার্টে লিখা ছিল, ‘আমাদের কোড কি শিশুদের হত্যা করা, সত্য?’

ঘটনার ছবি এবং ভিডিও কম্পানিজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নাদেলা কথা বলছেন এবং প্রতিবাদকারীদের পাত্তা দিচ্ছেন না।

তখনই দুইজন লোক দ্রুত কর্মীদের কাঁধে চাপড় মেরে ঘর থেকে বের করে দেয়।

এদিকে মাইক্রোসফট এপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা সকলের কথা শোনার কিছু পন্থা আছে। তবে আমরা অনুরোধ করছি, এটা এমনভাবে করা উচিত যাতে ব্যবসায়িক কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। যদি ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে আমরা অংশগ্রহণকারীদের সরে যেতে বলি। ব্যবসায়িক অনুশীলনের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবাদকারী কর্মীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে, মাইক্রোসফট এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কে এপির ১৮ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদন সম্পর্কেও কম্পানিটি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

গত অক্টোবরেও মাইক্রোসফট তার সদর দপ্তরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য অননুমোদিত মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনে সহায়তা করার জন্য দুই কর্মীকে বরখাস্ত করেছিল। মাইক্রোসফট সেই সময়ে বলেছিল, ‘তারা অভ্যন্তরীণ নীতি অনুসারে কিছু কর্মীকে বরখাস্ত করেছে।’ কিন্তু বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কম্পানিটি।

একদল কর্মী কয়েক মাস ধরে কম্পানির অভ্যন্তরের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তারা বলছে, মাইক্রোসফট তার ‘অ্যাজুর ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম’-এর মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে পরিষেবা প্রদান করছে। কম্পানির কিছু কর্মচারী ইসরায়েলের সমর্থনেও কথা বলেছেন। তারা বলেন, ‘যারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করেন তাদের অনিরাপদ মনে করছেন।’

এপির তদন্তে অভ্যন্তরীণ কম্পানির তথ্য এবং নথি থেকে সংগৃহীত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। যার মধ্যে রয়েছে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অ্যাজুরের মাধ্যমে এআই মডেলের ব্যবহার প্রায় ২০০ গুণ বৃদ্ধি করেছে।

এপির প্রতিবেদনটি সোশ্যাল মিডিয়া এবং কম্পানির অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে মাইক্রোসফ্ট কর্মীদের জানানো হয়েছিল এবং এ নিয়ে আলোচনাও করা হয়েছিল।

এপি কর্তৃক পর্যালোচনা করা স্ক্রিনশট অনুসারে, আরো এক ডজনেরও বেশি লোক প্রশ্ন তুলেছেন, কম্পানিটি কি মানবাধিকার রক্ষার জন্য তার ঘোষিত নীতি লঙ্ঘন করছে? এআই মডেলগুলো যেনো মানুষের ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করতে না পারে।

অক্টোবরে বরখাস্ত হওয়া মাইক্রোসফ্ট কর্মীদের একজন আবদো মোহাম্মদ। তিনি একজন গবেষক এবং ডেটা বিজ্ঞানী। তিনি বলেছেন, ‘সংস্থাটি মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির চেয়ে ব্যবসায়িক লাভকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দাবিগুলি স্পষ্ট। সত্য নাদেলা এবং মাইক্রোসফটের নির্বাহীদের ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে তাদের কর্মীদের প্রতি জবাবদিহি করতে হবে।’

সূত্র: এপি

কালের আলো/এসএকে