রাশ্মিকার সময়টা এখন…

প্রকাশিতঃ 12:21 pm | February 27, 2025

বিনোদন ডেস্ক, কালের আলো:

কর্ণাটকের বিরাজপেট শহরের মানদানা পরিবারে রাশ্মিকার জন্ম। বাবা মদন মানদানা ব্যবসায়ী। স্থানীয় শহরে রয়েছে কফির বাগান ও মিলনায়তন ব্যবসা। পরিবার সচ্ছল হলেও শৈশবে টের পেয়েছেন টানাপড়েনের আঁচ।

এমনও দিন গেছে, পছন্দের খেলনাও কিনে দিতে পারেননি মা-বাবা। বাড়িভাড়া দিতেও হিমশিম খেতেন তাঁর বাবা। তবে কন্যার পড়াশোনায় ছাড় দেননি। রাশ্মিকাকে পড়িয়েছেন শহরের ভালো প্রতিষ্ঠানে।

কন্যাও বড় হয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন সাইকোলজি, সাংবাদিকতা ও ইংরেজি সাহিত্যের ওপর।

শৈশবে রাশ্মিকার আরো একটি সীমাবদ্ধতা ছিল—মানুষের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারতেন না। এ কারণে সহপাঠী কিংবা অন্যরা প্রায়ই তাঁকে ভুল বুঝত। সেই জড়তা ও সীমাবদ্ধতা দূর করতে মায়ের ভূমিকা বারবার স্বীকার করেছেন অভিনেত্রী।

অতীত-বন্দনায় একটু বিরাম দিয়ে বর্তমানে আসা যাক। ভারত ও বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাগৃহে এখন চলছে লক্ষ্মণ উটেকরের ‘ছাবা’। মারাঠা সম্রাট সাম্ভাজি মহারাজের জীবন অবলম্বনে নির্মিত এই ছবির নাম ভূমিকায় আছেন ভিকি কৌশল। আর তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে রাশ্মিকা। ছবিটির নির্মাণ ও প্রচারণায় ব্যয় হয়েছে ১৩৪ কোটি রুপি।

মুক্তি পেয়েছে ভালোবাসা দিবস অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যেই বক্স অফিস থেকে তুলে নিয়েছে প্রায় ৫১০ কোটি রুপি! এখনো কমছে না ছবিটির তেজ। মঙ্গলবারও (২৫ ফেব্রুয়ারি) এটি আয় করেছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ রুপি। সামনে রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। বক্স অফিস বিশ্লেষকদের ধারণা, এই উইকেন্ডে ছবিটি ৬০০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে ফেলতে পারে।

‘ছাবা’র আগে রাশ্মিকাকে পর পর দুটি ব্লকবাস্টার হিট ছবিতে দেখা গেছে। একটি সুকুমারের ‘পুষ্পা ২ : দ্য রুল’-এ। এটি ২০২১-এর ছবি ‘পুষ্পা : দ্য রাইজ’-এর দ্বিতীয় কিস্তি। প্রায় ৫০০ কোটি রুপির বিশাল বাজেটে নির্মিত হয়েছে এটি। আর গেল বছরের ৫ ডিসেম্বর মুক্তির বক্স অফিসে চালিয়েছে তাণ্ডব। একের পর এক ভেঙেছে রেকর্ড। বিশ্বব্যাপী আয় করেছে এক হাজার ৮০০ কোটি রুপির বেশি। প্রায় পৌনে চার ঘণ্টার ছবি হয়েও দর্শককে দিয়েছে ভরপুর বিনোদন। এই ছবিতে রাশ্মিকার অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। অভিনেত্রী নিজেও চরিত্রটির জন্য ভারতের জাতীয় পুরস্কারের স্বপ্ন দেখছেন।

এর আগে ২০২৩-এর ডিসেম্বরে রাশ্মিকা হাজির হন হিন্দি ছবি ‘অ্যানিমেল’-এ। বানিয়েছেন দক্ষিণ ভারতীয় নির্মাতা সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা। ছবির বাজেট খুব বেশি নয়, ১০০ কোটি রুপি।

বিপরীতে আয় করেছে ৯১৭ কোটি রুপি! ছবিটির বিভিন্ন দৃশ্য থেকে গান, অন্তর্জালে বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও জুটেছে টিম ‘অ্যানিমেল’-এর ঝুলিতে।

আলাদা করে সমালোচিত হয়েছিলেন রাশ্মিকাও। ছবির একটি দৃশ্যে তাঁর সংলাপ ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেনি দর্শক। দাঁতে দাঁত চেপে কথাটি বলেছিলেন অভিনেত্রী। সেটার ক্লিপ অন্তর্জালে হয়েছিল ভাইরাল। আর রাশ্মিকার জুটেছিল নিন্দা। তবে সেটার রেশ টেকেনি খুব একটা। ছবি মুক্তির পর বক্স অফিস সাফল্যে সব নিন্দাই যেন হাওয়া হয়ে গিয়েছিল।

চলচ্চিত্র বাণিজ্যে বিরাট ধাক্কা হয়ে এসেছিল কভিড-১৯। তবে মহামারি কাটিয়ে বিনোদনের বৃহত্তম এই মাধ্যম চাঙ্গা হতে বেশিদিন লাগেনি। আর এই কভিডের পর ভারতীয় তারকাদের মধ্যে শুধু হাতে গোনা কয়েকজন স্থানীয় বক্স অফিসে দুই হাজার কোটির গণ্ডি পার করতে পেরেছেন। তার মধ্যে রাশ্মিকা একজন। তিনি ছাড়া অভিনেত্রী হিসেবে শুধু দীপিকা পাড়ুকোন এই ক্লাবে রয়েছেন। ‘পাঠান’ ও ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’ দিয়ে দাপট জারি রেখেছেন দীপিকা। অন্যদিকে কভিডের পর রাশ্মিকার ছবির সংখ্যা আট। এগুলো হলো পুষ্পা : দ্য রাইজ (২৬৮ কোটি রুপি), আদাভাল্লু মিকু জোহারলু (৯ কোটি ৫৭ লাখ), সীতা রাম (৬৫ কোটি ৪৯ লাখ), গুড বাই (৬ কোটি ৭৫ লাখ), বারিসু (১৭৮ কোটি ৮০ লাখ), অ্যানিমেল (৫৫৪ কোটি), পুষ্পা ২ : দ্য রুল (এক হাজার ২৬৫ কোটি) ও ছাবা (৩৬৩ কোটি)।

এদিকে রোজার ঈদে ফের প্রেক্ষাগৃহে আসছেন রাশ্মিকা। এবার বলিউড ভাইজান সালমান খানের সঙ্গে ‘সিকান্দার’-এ। নির্মাণে আছেন দক্ষিণ ভারতের এ আর মুরুগাদোস। প্রায় ৪০০ কোটির বড় বাজেটে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি। দর্শকের মধ্যে এটি ঘিরে আগ্রহও প্রবল। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সমীকরণ মিলে গেলে আরো একটি ব্লকবাস্টার যুক্ত হবে রাশ্মিকার ঝুলিতে।

উল্লেখ্য, রাশ্মিকার শোবিজ যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিযোগিতায় তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। পুরস্কার নেন অক্ষয় কুমারের হাত থেকে। ওই সময় কিছুদিন মডেলিং করেছিলেন রাশ্মিকা। এর মধ্যেই যুক্ত হন কন্নড় ছবি ‘কিরিক পার্টি’তে। শুটিংয়ে সহ-অভিনেতা রক্ষিত শেঠির সঙ্গে জড়িয়ে যান প্রেমে। ২০১৬ সালে ছবিটি মুক্তি পায় এবং বক্স অফিসে হয় ব্লকবাস্টার হিট। যদিও ২০১৮ সালে রক্ষিতের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়। তবে রাশ্মিকাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কালের আলো/এসএকে