স্থানীয় নির্বাচন ইস্যুতে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে: তারেক রহমান

প্রকাশিতঃ 12:47 pm | February 27, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপির বর্ধিত সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সংস্কার’ কিংবা ‘স্থানীয় নির্বাচন’ এসব ইস্যুতে জনগণের সামনে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে ‘জাতীয় নির্বাচন’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও ‘জাতীয় নির্বাচন’ নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছেনা।

রাজনীতিতে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপির কাছে সংস্কারের ধারণা নতুন কিছু নয়।সরকারে কিংবা বিরোধী দলে বিএনপি যখন যে অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করেছে জনগণের আকাঙ্খাকে ধারণ করে/ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সময়েই রাষ্ট্র সরকার ও রাজনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল মেরামতের জন্য দফা ৩১টি হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি । সেটি হলো ‘একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ঠিক তেমনি উদ্দেশ্যও একটি। সেটি হলো ‘রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা’। এটি নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্র-নিরাপত্তা-সমৃদ্ধি কোনটিই টেকসই হবেনা।

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বর্ধিত সভা দীর্ঘ ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া। ফ্যাসিবাদী শাসনকালে এরপর আর বিএনপির বর্ধিত সভা কিংবা কাউন্সিল অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি।

চিকিৎসাধীন থাকায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তিনি এই সভার সাফল্য কামনা করেছেন। তিনি আপনাদের কাছে দোআ চেয়েছেন। দেশনেত্রীর শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা আল্লাহর দরবারে দোআ কামনা করছি।মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব আর সুদক্ষ নেতৃত্ব বিএনপিকে পৌঁছে দিয়েছিলো সারাদেশের প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি ঘরে।

আজকের এই বর্ধিত সভার শুরুতেই আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে চাই। তিনি একদলীয় অভিশপ্ত বাকশালের অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আলো জ্বালিয়েছিলেন। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নিষিদ্ধ করা সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। জনগণের ভালোবাসায় ধন্য বিএনপির হাতে গণতন্ত্রের ঝান্ডা তুলে দিয়েছিলেন।

বিএনপির জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচার বিরোধী ধারাবাহিক আন্দোলনে, যারা শহীদ হয়েছেন আহত হয়েছেন সন্তান স্বজন হারিয়ে যেসব পরিবার নিদারুন দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন, যাদের শ্রম ঘাম মেধায় বিএনপি আজ আপামর জনগণের কাছে দেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, আজকের বর্ধিত সভার শুরুতে আমি তাদের প্রত্যেকের অবদানকেও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই।

সর্বোপরি ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদ দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন, ২০২৪ সালে জুলাই-আগষ্টে তাবেদার অপশক্তির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধের সাহসী বীর আবু সাইয়ীদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম রিয়া গোপ, আব্দুল আহাদএবং বিএনপির পাঁচ শতাধিকসহ হাজারো শহীদ এবং আহত যোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।

হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতাপ্রিয় বীর জনতার রক্তক্ষয়ী গণ অভুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এই সুযোগ এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করার জন্য এরইমধ্যে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্তপিচ্ছিল রাজপথে গড়ে ওঠা ‘জাতীয় ঐক্য’ এবং জাতীয় নির্বাচনে’র পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে।
.
‘জাতীয় ঐক্য’ এবং ‘জাতীয় নির্বাচনে’র পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি দেশের কৃষক শ্রমিক জনতা আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ তথা সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার আহবান জানাই। যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলো তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমে নেই।

তিনি বলেন, সারাদেশে খুন হত্যা ধর্ষণ চুরি ছিনতাই রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতিকিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করতে পারছেনা সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করতে চাইছে এটি জনগনের কাছে বোধগম্য নয় ।

গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারাদেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া যা সরাসরি গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বিরোধী। গণ হত্যাকারী টাকাপাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এইফাঁদে বিএনপি পা দেবেনা।

বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান, সারাদেশে গণ হত্যাকারীদের দোসর
মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের ‘স্থানীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাথেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট ‘কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ’ ঘোষণা করুন।

মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এ পর্যন্ত ১৬/১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলেরআত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সকল নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং, প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ‘জাতীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।

দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন/অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে/ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে । নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আরো সতর্কতা অবলম্বনের আহবান জানাই।

এবার আমি সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মী বিশেষ করে এই বর্ধিত সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা বলতে চাই। দীর্ঘদিন থেকে আমি আপনাদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও যোগাযোগ এবং কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে আমি কখনোই আপনাদের কাছ থেকে দূরত্ব অনুভব করিনি।

আমার মনে হয়, এখানে উপস্থিত এমন একজনকেওপাওয়া যাবেনা যার সঙ্গে আমার অন্ততএকবার হলেও কথা হয়নি। কিংবা ‘টেক্সট মেসেজ’ আদান প্রদান হয়নি। তবে আজ এখানে সবাইকে একত্রে পেয়েছি। আপনাদেরকে অভিনন্দন। আমি বিশ্বাস করি যে দলে আপনাদের মতো ত্যাগী এবং সাহসী নেতাকর্মী রয়েছে সেই দলকে কোনো স্বৈরাচার-ই দমিয়ে রাখতে পারেনা।

আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যে দেশে মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান তথা দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বসবাসকারী/ আমাদের সকলের একটিই পরিচয় ‘আমরা বাংলাদেশী’।

পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। বিএনপি মনে করে/বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু মিত্র বলে কিছু নেই। বরং একটি দেশের সঙ্গে অপর দেশের সম্পর্ক হবে ‘পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা, প্রয়োজন এবং ন্যায্যতা’র ভিত্তিতে। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের নীতি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ । অর্থাৎ নিজ দেশ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষাই হতে হবে প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার।

আশা করি বর্ধিত সভায় এই আলোকেই আপনাদের বক্তব্য উপস্থাপিত হবে। এই মুহূর্তে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। সুতরাং বিএনপির কাছে জনগণের যেমন আশা ভরসা প্রত্যাশা রয়েছে। একইসঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাও থেমে নেই। সুতরাং, চক্রান্তকারীদের মোকাবেলা করে কিভাবে দলকে আরো শক্তিশালী এবং সুসংহত করা যায় আমি আশা করি আপনাদের আলোচনায় সেই সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে।

সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক-শ্রমিক দরিদ্র-মেহনতি-স্বল্প আয় কিংবা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত-পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রী তরুণ তরুণী তথা সকল শ্রেণী পেশার মানুষের স্বার্থ রক্ষা এবং জীবন মানোন্নয়নে আপনাদের নিজ নিজ এলাকাভিত্তিক কি ধরণের পদক্ষেপ নেয়া যায় আশা করি আপনাদের বক্তব্যে সেসব বিষয়ও থাকবে।

দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পক্ষে বিপক্ষে অবশ্যই আপনারা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরবেন। তবে একটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই সেটি হলো বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার। এই পরিবারের নানাবিষয়ে আমাদের মতের অমিল থাকতেই পারে। সুতরাং বক্তব্য দেয়ার সময় ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিরোধকে এড়িয়ে যাওয়া বাঞ্চনীয় বলেই আমি মনে করি।

আমরা সবাই আমাদের ঐক্যের শক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত। ঐক্যই আমাদেরকে বারবার বিজয় আর সফলতা এনে দিয়েছে। সুতরাং আমাদের খেয়াল রাখা জরুরি আলোচনা সমালোচনা যেন নিজেদের মধ্যকার ঐক্য বিনষ্টকারী কিংবা দলের ক্ষতির কারণ না হয়। আরো একটি বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নেতানেত্রীদের সম্পর্কে আপনারা বক্তব্য দেয়ার সময় দয়া করে প্রশংসাসূচক শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা, বুদ্ধিমত্তা এবং পরিমিতি বোধের পরিচয় দেবেন।

গত দেড় দশকে সারাদেশে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ভিন্ন দল এবং মতের নেতাকর্মীদেরকে অবর্ণনীয় নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। কেবল বিএনপিরই প্রায় ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড়লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলমের মতো অনেক নেতাকর্মীর আজ পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধে হাজার হাজার নেতা কর্মী সমর্থককে গুম খুন অপহরণ করা হয়েছে। তবুও বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ দল ছেড়ে যাননি। । স্বৈরাচারের সঙ্গে করেননি আপোষ।

আপনাদের এই সৎসাহস এবং সততার কারণে বিএনপি আজ শুধু একটি সাধারণ রাজনৈতিক দলই নয়। দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ বিএনপিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড হিসেবে বিশ্বাস করে। এটি একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি।

এ কারণেই দলের সর্বস্তরের প্রতিটি নেতাকর্মীকে আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আচরণ আচরণে হতে হবে আরো সতর্ক এবং সংযত । তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোটি কোটি নেতাকর্মী সমর্থকদের এই বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো নেতা কর্মী হয়তো নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তাই আমি আপনাদেরকে আবারো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

শহীদ জিয়া বলেছিলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড়। দলের প্রতি আপনার আপনাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর দীর্ঘ দিনের সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। তারপরও যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হবেন ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমাকে বাধ্য হয়েই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবেনা।

জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্য। বিএনপি জনগণকে বিশ্বাস করে। জনগণও বিএনপিকে বিশ্বাস করে। সুতরাং আপনার প্রতি আপনাদের প্রতি বিএনপির প্রতি জনগণের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে জনগণের সঙ্গে থাকুন জনগণকে সঙ্গে রাখুন।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং বিএনপি সমার্থক। দেশে গণতন্ত্র থাকলে বিএনপি থাকে। গণতন্ত্র বিপন্ন হলে বিএনপির স্বার্থও বিপন্ন হয়। মাফিয়া প্রধানের পলায়নের পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। আপনারা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন।

আমি গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিতে চাই, বিএনপি শুধুমাত্র আপনাদের ভোটের পুনরুদ্ধারই নয় আপনার ভোটের প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যে সরকার আপনার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমি জনগণের সমর্থন সমর্থন চাই.সকলের সহযোগিতা চাই।

সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভার্থীদের প্রতি আহবান,আপনারা শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

কালের আলো/এএএন/কেএ