মেরিন ড্রাইভে রেইস প্রতিযোগিতায় বৈচিত্র্যময় রূপে সাইক্লিস্টরা, দ্যুতি ছড়ানো তারুণ্যের ভূমিকা প্রজ্জ্বলিত করলেন সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 10:08 pm | February 28, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

পাহাড় আর সাগরের গভীর মিতালীর অপূর্ব এক দৃশ্য। সড়কের একপাশে উঁচু পাহাড়ে সবুজের হাতছানি। অন্যপাশে যেন আছড়ে পড়ছে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ। এই দুয়ের বুক চিরে মাঝখানে নদীর মতো গেছে বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ সড়ক। ভোরের আলো ফুটার সঙ্গে সঙ্গেই মাঝখানে দীর্ঘ সড়ক ধরে সাইকেল নিয়ে ছুটছেন কয়েক শ মানুষ। কে কার আগে যাবে এ নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা।

অদম্য মনোবল, সাহসিকতা, শারীরিক সক্ষমতা আর অপরিমেয় মানসিক দৃঢ়তায় কঠিন এক সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে একীভূত দেশ-বিদেশের ৪০০ সাইক্লিস্ট। সাগর তীর আর পাহাড়ের পাদদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনিন্দ্য সুন্দর এমনই এক আয়োজনের দেখা মিললো ‘মেরিন ড্রাইভ রেস ২০২৫’ ঘিরে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কটিতে।

পর্যটন নগরী কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিশ্বব্যাপী উপস্থাপনের দৃঢ় প্রত্যয়ে দেশপ্রেমের প্রজ্জ্বলিত শিখার আলোয় গোটা দেশকে উজ্জীবিত করা সাইক্লিস্টদের অননুমেয় উচ্ছ্বাস আর হৃদয় পরিপ্লুত আবেগে বরণ করেন স্বয়ং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারের ইনানীতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত মেরিন ড্রাইভ রেইস-২০২৫ প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিজয়ী সাইক্লিস্টদের মাঝে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন তিনি।

এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের প্রাণশক্তি তরুণ প্রজন্মের দ্যুতি ছড়ানো ভূমিকাকে প্রজ্জ্বলিত করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের তরুণ প্রজন্ম একটি সুস্থ জাতি ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন এবং সর্বস্তরে সুস্থতার চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যে ‘রাইড ফর গ্লোরি’ এই বার্তাকে ধারণ করতে হবে।’

তিনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিদেশিদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। দেশব্যাপী এই ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন সেনাপ্রধান বলেন, ‘কক্সবাজারে সাইক্লিংয়ের জন্য মেরিন ড্রাইভ রয়েছে। এটা এতো ব্যস্ত থাকে না। সকাল বেলা শুরু করে প্রতিযোগিতা শেষ করেছেন। এই মেরিন ড্রাইভে এই প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।’ এ সময় সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর পয়েন্ট; ভোর ৫টা থেকে জড়ো হতে থাকে দেশি-বিদেশি সাইক্লিস্টসরা। সকালে ঠিক ৬টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বেলুন উড়িয়ে প্রথমবারের মেরিন ড্রাইভ রেইসের উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম। এরপর শুরু হয় প্রতিযোগিতা। সাইকেল নিয়ে ছুটতে থাকেন সাইক্লিস্টসরা। মেরিন ড্রাইভে প্রতিযোগীদের যেন অবিরাম ছুটে চলা; সবারই লক্ষ্যে জয়ী হওয়া।

দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে ১১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রমে চেষ্টায় অবতীর্ণ ৪০০ প্রতিযোগীর। কেউ এই প্রথম সাইকেল রেইসে অংশ নিয়েছেন আবার কেউ কেউ সাইকেল রেইসটা শখের বশে করছেন। তবে প্রতিযোগীদের প্রত্যেকের কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছে একই কথা। সেটি হচ্ছে মেরিন ড্রাইভে এমন আয়োজন অনন্য ও অসাধারণ।

আয়োজক সূত্র জানায়, পেশাদার ক্যাটাগরির সাইক্লিস্টরা দরিয়ানগরের প্যারাসেইলিং পয়েন্ট থেকে শুরু করে টেকনাফের জিরো পয়েন্ট হয়ে বে-ওয়াচ হোটেলের সম্মুখে এসে সাইক্লিং শেষ করেন। পেশাদার গ্রুপের ফিনিশিং টাইম ছিল মাত্র ৩ ঘণ্টা। আবার অপেশাদার ক্যাটাগরির প্রতিযোগীরা প্যারাসেইলিং পয়েন্ট থেকে হোটেল বে-ওয়াচ, বালিয়াখালী কাঁকড়া বিচ হয়ে আবার হোটেল বে-ওয়াচে সম্মুখে এসে শেষ করেন সাইক্লিং। তাঁদের ফিনিশিং টাইম ছিল সাকুল্যে আড়াই ঘণ্টা।

এই প্রতিযোগিতায় প্রফেশনাল (১৩ থেকে ৪৪ বছর) ১১০ কিলোমিটার গ্রুপে নারী ও পুরুষদের মধ্যে সেরা বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন কর্পোরাল ফাতেমা খাতুন (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) ও মিজানুর রহমান। এ্যামেচার (১৩ থেকে ৪৪ বছর) ৫৫ কিলোমিটার গ্রুপে নারী ও পুরুষদের মধ্যে সেরা বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন লরা (ব্রাজিল) ও সৈয়দ মুবিন। এছাড়াও, নারী-পুরুষ উভয় ক্যাটাগরির (১৩-৪৪ বছর বয়সী) প্রথম ১০ জনকে সম্মাননা স্মারক দেয়া হয়। বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশনের অভিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী এই প্রতিযোগিতা আয়োজনে সার্বিক সহায়তা করেন।

অনুভূতির কথা জানিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা তানহা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সাইক্লিংয়ের কালচারটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ধরে রাখতে হলে রেইসিংয়ের দিকে ফোকাস করতে হবে। বিশেষ করে, নারীদের। এই প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম হয়েছি, ৫৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছি ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে। পাহাড়-সমুদ্রের মাঝে এই আয়োজন ছিল সত্যিই অসাধারণ।’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বিদেশি প্রতিযোগী লরা বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত এমন একটি পরিবেশে সাইক্লিং প্রতিযোগিতা অংশ নিতে পেরে। কক্সবাজার খুবই সুন্দর। আমি খুবই আনন্দিত।’

শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্পোরেট নাইট আয়োজন
দেশের শীর্ষস্থায়ী বেসরকারি ব্যাংক ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারের বেওয়াচ হোটেলে একটি কর্পোরেট নাইট আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি এর চেয়ারম্যান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আইএসপিআর জানায়, এই সমাবেশে শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসায়িক মতবিনিময় এবং সহযোগিতার জন্য নতুন উপায় অন্বেষণ করেছে।

কালের আলো/এমএএএমকে