এমআইএসটি’র প্রথম আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা, গড়ে উঠবে আগামীর ব্যবসায়িক নেতৃত্ব

প্রকাশিতঃ 11:20 pm | March 01, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

এক ঝাঁক তরুণ, চোখে একরাশ স্বপ্ন। কেউ বের হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি। তবে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক জগত মাতিয়ে বেড়াবে এই প্রত্যাশায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঝালিয়ে নিচ্ছে নিজেদের। সেই পথ তৈরি করেছে মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) ক্যারিয়ার ক্লাব (এমসিসি)। তরুণ প্রজন্মকে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করা এবং আগামীর ব্যবসায়িক নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯৩টি দল অংশগ্রহণ করেন। মেধাবী তরুণ মনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন, সমস্যা সমাধানে দক্ষতা এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনা প্রদর্শন করেন প্রত্যেকেই। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা মেধাবীরা উপস্থাপন করেন উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা।

এমআইএসটি’র মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠানে এমআইএসটি’র কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ শনিবার (০১ মার্চ) সি স্টেম আয়োজিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা ইনগিবিজ’র গ্র্যান্ড ফাইনালের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তরুণদের ক্ষমতায়নের রূপান্তরমূলক শক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাদের অমিত সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন, এই প্রতিযোগিতাটি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও শিল্পের সংযোগকে আরও দৃঢ় করেছে। পাশাপাশি বাস্তব সমস্যার সমাধানে ইঞ্জিনিয়ারিং-ভিত্তিক ব্যবসায়িক সমাধানের সম্ভাবনাকেও তুলে ধরেছে।

এমআইএসটি’র ডিরেক্টর অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার (ডিএসডব্লিউ) পুরো আয়োজনটি তত্ত্বাবধান করে। গ্র্যান্ড ফাইনালে সভাপতিত্ব করেন এমআইএসটি ক্যারিয়ার ক্লাবের (এমসিসি) উপদেষ্টা কর্নেল সরকার মো. ইকবাল হোসেন। আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এই প্রতিযোগিতাটি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯৩টি দল নিবন্ধন সম্পন্ন করে। প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৪ ফেব্রুয়ারি। বিভিন্ন ধাপে প্রতিযোগীদের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং ব্যবসায়িক কৌশল পরীক্ষা করা হয়।

মূলত এই প্রতিযোগিতাটি তরুণদের প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রতিযোগিতা তরুণদের উদ্ভাবনী ধারণা, অগ্রণী প্রযুক্তি ও দূরদর্শী সমাধানের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসার সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রতিযোগিতায় ৮৪টি দল তাদের সমাধানের সারসংক্ষেপ জমা দেয়। প্রতিযোগীদের সেবা.এক্সওয়াইজেড-এর জন্য একটি এআই চালিত ব্যক্তিগত সহায়ক সেবা ডিজাইন করতে বলা হয়। ১২ জন শিল্প বিশেষজ্ঞ এই ধারণাগুলো সমস্যার বিশ্লেষণ, উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা, বাস্তবায়নযোগ্যতা এবং উপস্থাপনার মান অনুযায়ী মূল্যায়ন করেন। কঠোর মূল্যায়নের পর ৩৪টি দল সেমিফাইনালে উন্নীত হয়।

আইএসপিআর আরও জানায়, ৩৪টি দলের মধ্যে ২৯টি দল এআই চালিত ব্যক্তিগত সহায়ক সেবার জন্য অনলাইন ভিডিও কমার্শিয়াল (ওভিসি) জমা দেয়। ৯ জন শিল্প বিশেষজ্ঞ এই ভিডিওগুলোর সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন, স্পষ্টতা, বাস্তবায়নযোগ্যতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া এনগেজমেন্ট পর্যালোচনা করেন। দুর্দান্ত প্রতিযোগিতার পর ৮টি দল ফাইনালে জায়গা করে নেয়। ফাইনালে ৮টি দল তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনার উপস্থাপনা ও প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করে। বর্ধনক্ষমতা, উদ্ভাবন এবং বাজারে প্রভাবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশ্লেষণ করা হয়। বিচারকদের মধ্যে ছিলেন-লাইট কেসেল পার্টনারস লিমিটেড’র কো-ফাউন্ডার ও সিইও বিজন ইসলাম, এজুর ডাটা এআই সিকিউিরিটি এসএমবি লিড’র ফারজানা আফরিন তিশা, মীর রিয়াজ উদ্দিন, তানজিম হাসান ফাহিম। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অসাধারণ ব্যবসায়িক দক্ষতা, উদ্ভাবন এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনার জন্য চ্যাম্পিয়ন নির্বাচিত হয়েছে আইইউটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম মার্কেট ব্লিজারার্স। অসাধারণ উপস্থাপনা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতার জন্য প্রথম রানারআপ হয়েছে নো সারপ্রাইজেস ও সেকেন্ড রানারআপ গিয়ার শিফটার।

এই প্রতিযোগিতা সক্ষমতার বিকাশ, সীমাবদ্ধতা অতিক্রম ও সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মেধাবী ও সম্ভাবনাময় তরুণদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের ব্যবসায়িক প্রাঙ্গণে নেতৃত্ব দান করতে প্রস্তুত করে তোলে। এই মিলনমেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব সমস্যার সমাধানে শিল্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছে। এই ঐতিহাসিক প্রতিযোগিতাটি এমআইএসটি’র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও শিল্পের সমন্বয়ে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে, যা অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে বলে মনে করে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

কালের আলো/এমএএএমকে