জাতীয় নাগরিক পার্টির নিবন্ধনের বিষয়ে সিদ্ধান্তহীন ইসি

প্রকাশিতঃ 3:20 pm | March 03, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

সাধারণত কোন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পেতে প্রধান তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রথম দুই শর্ত পূরণ করা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য একেবারেই অসম্ভব। কেননা, দলটি আগে কোনো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং কোনো আসনে জয়লাভ করেনি বা ন্যূনতম ভোটও পায়নি। নির্দিষ্ট কার্যালয়সহ কমিটি গঠন ও সমর্থক জোগাড়ের বিষয়টিও বেশ কঠিন। কারণ, অক্টোবরে হবে তফসিল।

ফলত নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আইনি দিক নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ আসে কি-না, সে অপেক্ষা করতে চায় সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। ঐক্যমত কমিশনেও বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসবে সে দিকেই যাবে কমিশন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশে বলেছে, নতুন দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের লক্ষ্যে বিদ্যমান এক তৃতীয়াংশ জেলা কমিটির পরিবর্তে ১০ শতাংশ জেলা এবং ১০০ উপজেলার পরিবর্তে ৫ শতাংশ উপজেলা/থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার বিধান করতে হবে।

একই রকম দাবি বিভিন্ন দল থেকেও করা হয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এ বিষয়ে বলেন, আমরা মনে করি, পুরো নিবন্ধন বিধিমালাই পরিবর্তন করা দরকার। কারণ দল নিবন্ধনের যে আইন ও বিধি তৈরি করা হয়েছে তা জনগণের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার অধিকার ক্ষুণ্ন করে।

জানা যায়, ইসিতে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলন নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর প্রায় প্রতিটিই আবেদনের পাঁচ থেকে ছয় বছর পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালেও শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছিল।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা।

জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, অনেকেই দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য বলছেন। কোনো কোনো দল থেকে আরো কঠিন করার জন্য বলা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বর্তমান প্রক্রিয়া রাখার পক্ষে। অনেকেই নিবন্ধন প্রথা তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। কাজেই এটা একটা জটিল বিষয়।

তিনি বলেন, সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনও দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে সুপারিশ করেছে। সরকার ঐক্যমত কমিশন গঠন করেছে। এখন সেখান থেকে কী সুপারিশ আসে সেটা দেখতে হবে। যেহেতু এটা রাজনৈতিক দলের বিষয়, তাই তাদের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তে সহজে আসা যাবে না। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

কালের আলো/এমএইচ/এনএইচ