সড়কে দাঁড়িয়েই ইফতার, যানবাহন চলাচলের নির্দেশনা ওদের
প্রকাশিতঃ 8:45 pm | March 03, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
রমজান মাসের আজ দ্বিতীয় দিন। অফিস শেষ করে ঢাকার বাসিন্দারা প্রতিদিন বিকেলে বাসার দিকে ছোটেন পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার জন্য। তারা যাতে ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে সড়কে থাকেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমনকি সড়কে দাঁড়িয়েই ইফতার করতে হয় তাদের।
পানির বোতল নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকেন আর যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। ঠিক ইফতারের সময় হয়ে গেলে পানি পান করে ইফতার করেন তারা। একদিকে সড়কে দাঁড়িয়ে পানি পান করে ইফতার করছেন অন্যদিকে যানবাহনকে চলাচলের নির্দেশ দিচ্ছেন।
সোমবার (৩ মার্চ) ইফতারের আগ মুহূর্তে ও পরবর্তী সময়ে রাজধানীর বিজয় সরণিতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের এই কর্মচঞ্চলতা প্রতিবেদকের চোখে পড়ে।
রাজধানীর বিজয় সরণিতে দেখা যায়, এ ব্যস্ততম এলাকাটিতে রয়েছে চারদিক দিয়ে সড়ক। বিকেল ৩টার পর থেকে এই সড়কে ঘরমুখী মানুষের চাপ পড়ে। এর ফলে বেড়ে যায় যানজট। বিকেল সাড়ে ৫টার পর এই চাপ আরও বেড়ে যায়। চারদিকের সড়কে গাড়ির লম্বা লাইন সৃষ্টি হয়।
আরও দেখা যায়, একদিকে যখন যান চলাচল শুরু হয় অন্য তিনদিকে বন্ধ থাকে। তখন অন্য তিনদিকে গাড়িতে থাকা মানুষজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের তাড়া দিতে থাকেন যেন দ্রুত তাদের লেনে যানচলাচল শুরু করা হয়। তখন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যাত্রীদের কাছে গিয়ে বলেন সবাই ইফতার করবে বাসায়, আপনারাও করবেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আপনারা যেন দ্রুত বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারেন। একটু ধৈর্য ধরেন আমাদের সহযোগিতা করেন। এভাবে একের পর এক লেনের যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দেন তারা।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে যানচলাচল একদিকে যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি গাড়ির চাপও বাড়তে থাকে প্রচুর। পরে বিকেল ৫টা পঞ্চান্ন মিনিটের দিকে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের হাতে পানির বোতল তুলে দেওয়া হয়। যখন আযান শুরু হয় তখন একহাত দিয়ে পানি পান করে ইফতার করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা আর অন্য হাত দিয়ে যানবাহন চলাচলে নির্দেশ দিচ্ছিলেন। শুধু তাই নয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যেমন পানি দিয়ে ইফতার করছেন তেমনি রাস্তায় যেসব যাত্রীরা আটকে আছেন তাদেরও দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা যাতে তারাও ইফতার করতে পারেন।
ইফতারের সময় বিজয় সরণি থেকে সংসদ ভবনের দিকে যাওয়া রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মো. ফরিদ। যখন আযান শুরু হলো তখন হাতে থাকা এক বোতল পানি দিয়ে ইফতার করছিলেন তিনি। তখনো তার অন্য হাত দিয়ে চলছিল যানবাহনগুলোর জন্য ট্রাফিক নির্দেশনা। অর্ধেক পানি পান করার পর সড়কে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানের চালককে বাকি পানি দিয়ে দেন তিনি। যাতে সেও ইফতার করতে পারেন। মিনিটখানেক পর ফরিদের এক সহকর্মী ২ পিস জিলাপি এনে দেন তাকে, ফরিদ সেই জিলাপি খেতে খেতে আবারও দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ফরিদ বলেন, প্রতিবার রোজার মাসে আমাদের এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ই সড়কে ইফতার করি। এতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মানুষজন যেন বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারে সেই চেষ্টাটা আমরা সর্বোচ্চ করি।
ইফতারের সময় সাত রাস্তা থেকে বিজয় সরণিতে আসার সড়কের মাথায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের যাদের ইফতারের সময় ডিউটি থাকে তাদের সবাইকে রাস্তায় ইফতার করতে হয়। প্রথমে আমরা পানি ও খেজুর দিয়ে ইফতার করি। পরে ইফতারের সময় পার হয়ে গেলে গাড়ির চাপ কমে গেলে তখন একজন একজন করে পাশে থাকা পুলিশ বক্সে গিয়ে সামান্য কিছু খাওয়া দাওয়া করি। এরপর আবার সবাই সড়কে চলে আসি। যে যার মতো দায়িত্ব পালন করতে থাকি।
ইফতারের পর বিজয় সরণিতে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. মোর্তোজা বলেন, আমরা যে সড়কে দাঁড়িয়ে ইফতার করি এটা বিশেষ কিছু না। প্রতি বছরই করি। আমাদের দায়িত্ব এটা যেন মানুষজন স্বস্তিতে ঘরে যেতে পারে। দীর্ঘ বছর ধরে রাস্তায় এভাবে দায়িত্ব পালন করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে এবার যেসব শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের জন্য এটা নতুন অভিজ্ঞতা। তাদের জন্য একটু হয়ত কষ্ট হয়ে দাঁড়ায় সারাদিন রোজা রেখে সড়কে ইফতার পালন করার।
কালের আলো/এসএকে