ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নেয়নি সৌদিয়া হোটেল
প্রকাশিতঃ 10:39 pm | March 03, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকায় ‘সৌদিয়া’ নামে একটি আবাসিক হোটেলে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। হোটেলটি থেকে ফায়ার সার্ভিস চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। সোমবার (৩ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের চেষ্টায় একটার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের সময় সেখানে যারা ছিলেন তারা ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ওই সময় ছাদে যাওয়ার দরজা বন্ধ থাকায় তারা যেতে পারেনি। ফলে সেখানে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে তারা মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনার পর মিলেছে ভয়াবহ তথ্য। হোটেল ভবনটি নির্মাণের সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। হোটেলটিতে ছিল না কোনো ধরনের ফায়ার সেফটি ব্যবস্থাও। ঘটনার পর হোটেল মালিক পলাতক রয়েছেন। পাওয়া যাচ্ছে না কোনো কর্মচারীকেও।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল কর্মকর্তার আবু তালহা জুবায়ের জানান, নিহতদের মরদেহ ছয় তলায় পাওয়া গেছে। একজনের মরদেহ পাওয়া গেছে বাথরুমের ভেতরে বাকি তিনজনের সিঁড়ির গোড়ায়। সিঁড়ির দরজা তালা মারা ছিল। নিহতদের সবাই পুরুষ। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তারা মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থলে ১২টা ৩১ মিনিটে বারিধারা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট পৌঁছায়। পরে দুপুর ১টা ৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রগতি সরনি মূল সড়কের পাশে অবস্থিত হোটেলটিতে আগুনের ঘটনায় পশ্চিম পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব পাশেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আগুনের খবর পেয়ে উৎসুক জনতা ভিড় করে সড়কে। এতে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে হিমশিম খায়।
সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে হোটেল সৌদিয়ার আশপাশে থাকা দোকানি, পথচারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবনটিতে আগুন লাগার সময় তারা কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পাননি। ফলে ভবনটিতে কয়েকজন আটকা পড়লেও তাদের বের করে আনার চেষ্টা করা সম্ভব হয়নি। শাহজাহান মিয়া নামে একজন পথচারী বলেন, তিনি আগুন দেখতে পেয়েছেন। তবে কাউকে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে শোনেননি। আগুন লাগার প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
- বন্ধ ছিল ছাদে যাওয়ার দরজা, ধোঁয়ায় ৪ জনের মৃত্যু
- পুড়ে গেছে ভবনটির বড় অংশ, পলাতক হোটেল মালিক
- ছিল না কোনো ধরনের ফায়ার সেফটিও
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের সূত্র বলছে, ভবন ও হোটেল মালিককে ফায়ার সেফটির বিষয়ে বারবার নোটিশ করার পরও তারা কোনো ধরনের জবাব দেননি। ফলে আজকের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্টরা।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোনের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান জানিয়েছেন, ভবনটি নির্মাণের জন্য রাজউকের কোনো অনুমোদন ছিল না। এছাড়া ফায়ার সেফটি কোনো ধরনের ব্যবস্থাও ছিল না। পাশাপাশি রুমগুলো ছিল খুব সংকীর্ণ। ছাদে ওঠার সিঁড়ির দেয়ালে থাকা জানালা ও দরজা ছিল বন্ধ। ফলে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
ভবনটির নিচ তলায় থাকা মুন্নি এন্টারপ্রাইজে গাড়িচালক ইব্রাহিম বলছিলেন, আগুনটা ঠিক দুপুর ১২টার পরপরই লাগে। তবে আমরা নিচে থাকলেও বুঝতে পারিনি। উপরে যে কেউ আগুনে আটকে পড়েছে আমরা সেটাও জানতে পারিনি। কারণ কেউ চেঁচামেচি বা চিৎকারও করেনি।
তিনি জানান, আগুন লাগার পর ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হতে থাকে। পথচারীরা দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করে। এরপর তিনিসহ পাশে থাকা অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেরিয়ে আসেন। এরপর তারা ফায়ার সার্ভিসের খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস এসে ভবনটির সংকীর্ণ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে না পারায় দক্ষিণ দিকে ভবনের তৃতীয় তলার দেয়াল কেটে ভেতরে ঢুকে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তারা ভবনটির চিলেকোঠা থেকে তিনজন এবং হোটেলটির বাথরুমের সামনে থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে বলে জানতে পারেন তিনি।
ইব্রাহীম জানান, ভবনটিতে আগুন লাগার পর মালিক তানভীর ও অন্য কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু আগুন নেভানোর পরপরই তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভবনটির মালিক জহুরুল ইসলাম বিদেশে থাকেন। তার ভাই তানভীর ভবনটিতে ‘হোটেল সৌদিয়া’ নামে আবাসিক হোটেল খুলে ব্যবসা করেন।
স্থানীয়রা জানান, ভবনটির ভেতরে থাকা একটি বিউটি পার্লার থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, বিউটি পার্লারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। সেটির মালিক এক নারী। সাইনবোর্ডে তার ফোন নম্বর থাকলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কালের আলো/এমএএইচ/এনএইচ