মশা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই

প্রকাশিতঃ 5:06 pm | March 05, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

১০ বছর যাবত ঢাকায় বসবাস করেন গৃহিণী সুমাইয়া আক্তার। থাকেন ধানমন্ডির ট্যানারি এলাকায়। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারের মতো এত মশা আর দেখিনি। বিকেল হওয়া মাত্র দরজা-জানালা বন্ধ করতে হয়। একটু ফাঁকা থাকলে পুরো ঘর মশায় ভরে যায়। ঠিক মতো কাজ করা যায় না। ইফতার তৈরির সময় রান্না ঘরের জানালা সামান্য পরিমাণ খুললেও মশার উৎপাতে থাকা যায় না। মশার কারণে স্বস্তিতে ইফতারও করতে পারছি না।’

শুধু এই গৃহিণীই নয় মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ রাজধানীর বাসিন্দারা। চলতি রমজান মাসে যেন মশার উৎপাত আরও বেড়ে গেছে। বিকেল হতেই শুরু হয় মশার জ্বালা। এতে স্বস্তিতে ইফতারও করতে পারছেন না নগরবাসী। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্রই মশার উপদ্রব। মশা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমও নজরে আসেনি নগরবাসীর।

নির্বাচন ভবনের সামনে অবস্থিত আগারগাঁও বস্তি। সেখানকার চা দোকানি রফিক অস্বস্তি নিয়েই বলেন, ‘এখানে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে বসবাস করাই দায়। একদিকে গরম অন্যদিকে টিনের চাল, তার ওপর মশার জ্বালা। আমরা গরিব মানুষ, কই যাবো ভাই, আপনে বলেন।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন থেকে ঠিকমতো মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ দেওয়া হয় না। গত দুই মাসে তারা মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করেনি। ড্রেন পরিষ্কার করা হয় না। আশপাশে কিছু পরিত্যক্ত জঙ্গল রয়েছে, সেখানেও মশা নিধন করতে কোনো প্রকার ওষুধ দেওয়া হয় না।’

স্থানীয়রা বলছেন, সামনে বর্ষা মৌসুমে মশার উৎপাত আরও বাড়বে। এতে এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এজন্য আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রস্তাবিত বাজেটে মশা নিধনের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা। মশার নিধনে প্রায় সমান অর্থ ব্যয় করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও। মশার পেছনে দুই সিটি করপোরেশনের এত বিশাল ব্যয় সত্ত্বেও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।

সিটি করপোরেশন এলাকায় জনপ্রতিনিধি মশকনিধন কার্যক্রমের তদারকি ছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি মনিটরিং করতেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কাউন্সিলরদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। বর্তমানে কয়েকটি ওয়ার্ডের সার্বিক কার্যক্রম দেখভাল করেন প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। এ কর্মকর্তার পক্ষে প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষে মাঠপর্যায়ে গিয়ে মশকনিধন কার্যক্রম দেখভালের খুব একটা সুযোগ নেই। ফলে মশকনিধনে যে স্বল্পসংখ্যক কর্মী মাঠে কাজ করেন, তাদের মধ্যেও গা-ছাড়া ভাব চলে এসেছে।

কালের আলো/এমএএইচএন