বরগুনা পৌরসভার প্রশাসকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতের সমন জারি
প্রকাশিতঃ 5:53 am | March 06, 2025

বরগুনা প্রতিবেদক, কালের আলো:
বরগুনা পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন থেকে টোল আদায়ের অভিযোগে পৌরসভার প্রশাসকসহ ছয় জনকে বিবাদী করে জনস্বার্থে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে টোল আদায় করায় জনস্বার্থে এ মামলাটি করেন বরগুনা পৌরসভার চরকলোনী নামক এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমীন। তিনি জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক।
বুধবার (৫ মার্চ) বরগুনার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক অপূর্ব বালা মামলাটি গ্রহণ করে বিবাদীদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তপু রায়হান বুধবার রাত ৯টার দিকে বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন।
মামলার বিবাদীরা হলেন– বরগুনা পৌরসভার প্রশাসক, পৌরসভার সচিব, টোল ইজারাদার মো. জসিম উদ্দিন, সহকারী ইজারাদার মো. সাবু মিয়া, মো. দোলন ও মো. সাবু মিয়া।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর টোল আদায়ের বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পৌর-১ শাখার উপ-সচিব সরোজ কুমার নাথের স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা কর্তৃক মহাসড়কে বিভিন্ন যানবাহন থেকে টোল আদায় বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই দায়ের করা রিট পিটিশনে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক জে বি এম হাসান এবং খায়রুল আলমের দ্বৈত বেঞ্চ টার্মিনালের বাইরের সড়ক, মহাসড়কে বাস, ট্রাকসহ সব যন্ত্রচালিত পরিবহন থেকে টোল আদায় বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সব সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভাকে নির্দেশনাসহ একটি রুল জারি করেন।
এরপর ২০২১ সালে বরগুনা আন্তঃজেলা ট্রাক, ট্যাং, লরি ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি পৌরসভার মেয়রকে পৌর টোল আদায় না করতে লিখিতভাবে একটি আবেদন জানান। তবে সব নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিবাদী পৌর প্রশাসক ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে অন্য বিবাদী ইজারাদারদের লোকজন পৌরসভার নির্ধারিত টার্মিনালের বাইরে সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্নস্থানে টোল আদায় করেন। এ ছাড়াও এ বছর ২ ফেব্রুয়ারি বরগুনা পৌরসভায় টোল আদায়ের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে দরপত্র আহ্বান করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ফলে পৌরসভার বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে টোলবক্স বসিয়ে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, টাফিসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত পরিবহন থেকে অবৈধভাবে পৌরসভার নামে ছাপানো রশিদের মাধ্যমে টোল আদায় করা হয়। টোল আদায়ের অন্তরালে রীতিমতো চাঁদা আদায় চলমান রয়েছে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমীন বলেন, টোল বাণিজ্যের কারণে যানবাহন শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একই সড়কে ঘণ্টার ব্যবধানে একটি গাড়ি দুই থেকে তিনবার চলাচল করলেও প্রত্যেকবার টোল দিতে হয়। এছাড়াও টোলের পরিমাণ অত্যধিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে আমরা পৌরসভায় নিয়মের বাইরে টোল আদায় বন্ধ করতে বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তবে পৌরসভার নির্ধারিত টার্মিনাল ব্যতীত সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে অবৈধভাবে টোল আদায়ের অন্তরালে চাঁদা আদায় থেকে বিরত থাকতে বারবার অনুরোধ করলেও তা বন্ধ করেননি।
মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তপু রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনস্বার্থে দায়ের করা মামলাটি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথমে বিচারকের কাছে আমরা মামলাটি দাখিলের অনুমতির জন্য আবেদন করি। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণের যোগ্যতার শুনানি করলে আদালত সকল বিবাদীকে সমন জারির নোটিশ প্রদান করেন। ধার্য তারিখে বিবাদীরা আদালতে ওই নোটিশের জবাব দেবেন।
কালের আলো/এসএকে