সিপিবির ৭৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষির্কী আজ

প্রকাশিতঃ 12:19 pm | March 06, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে সকাল ৮টায় পুরানা পল্টনের পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দলীয় নেতা-কর্মীরা। বিকেল ৪টায় মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সারাদেশে পার্টির পতাকা উত্তোলন, সমাবেশ-র‌্যালি-মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম জাতীয় পতাকা ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দলীয় পতাকা উত্তোলন করে। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া সিপিবি কার্যালয়ের নিচে অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরী করে ৭৭ বছরে যেসব নেতা-কর্মী পার্টির পতাকা সমুন্নত রাখতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি নেতারা গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় দলের সাধারন সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দেশ আজ ভয়াবহ সংকটে। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪ এর গণঅভুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে। অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের পর এখনকার সংগ্রাম পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সিপিবি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের সংগ্রামে অবিচল থেকে লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৬ র্মাচ এ জনপদের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিগত শতাব্দির বিশের দশকে ভারতবর্ষে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা ভিন্ন একটি অধিবেশনে মিলিত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি এবং একইসঙ্গে পার্টির পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটির ৪র্থ সম্মেলনে পৃথক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন পার্টি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি কার্যক্রম শুরু করে এবং ওই সম্মেলনকে প্রথম পার্টি কংগ্রেস হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কমিউনিস্ট কর্মীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, জেল-জুলুম-হুলিয়ার খড়গ নেমে আসে। হাজার হাজার কমিউনিস্টকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। তেভাগা, নানকার, টংকসহ নানা কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগঠিত হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ড কমিউনিস্ট রাজবন্দীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে সাতজন কমরেড শহিদ হন। নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সংগঠনে কমিউনিস্ট পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান সংঘটনে পার্টির পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত এবং অংশগ্রহণ এ দেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে।

পূর্ব পাকিস্তানের শুরু থেকেই শোষণ এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। এ দেশের ঐতিহ্যবাহী গণসংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠার পেছনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকাই মুখ্য। ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-গেরিলা বাহিনী গঠনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে ১১ ডিসেম্বর বেতিয়ারাতে মুখোমুখি লড়াইয়ে পার্টির কর্মী এবং ছাত্রনেতাসহ নয়জন শহিদ হন। স্বাধীন বাংলাদেশের নানা নিপীড়ন সহ্য করে পার্টি তার ভূমিকা পালন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০১ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবি’র লাখো মানুষের সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আন্দোলন, ১৯৯০ ও সর্বশেষ ২০২৪ এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামেই সিপিবি অনন্য ভূমিকা পালন করেছে।

কালের আলো/এএএন