আওয়ামী সরকারের সময়ে দলীয় ক্যাডার তথ্য কমিশন চালাতো
প্রকাশিতঃ 3:12 pm | March 06, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিগত সরকারের আমলে তথ্য কমিশন দলীয় ক্যাডার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
অন্যদিকে, কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বৃদ্ধি ও দুর্নীতি হ্রাস করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশে গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য তথ্য কমিশন যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তথ্য কমিশনকে একটি সাংবিধানিক স্বাধীন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) টিআইবির ধানমণ্ডি কার্যালয়ে ‘তথ্য কমিশনের কার্যকারিতা ও তথ্য অধিকার আইনের সংশোধনী’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, একেবারে নেতৃত্ব পর্যায়ে ছিল দলীয় ক্যাডার। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই অবস্থা হবে না, সেটি আমরা আশা করতেই পারি।
৬ মাসের বেশি সময় ধরে তথ্য কমিশনের দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর বর্তায় জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই যে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো, বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে একটি দেশে আইনগতভাবে তথ্য কমিশন থাকার কথা, সেটি ৬ মাস যাবৎ নেই। কমিশন যে নেই, এটি সরকারের অজানা নয়। কমিশন গঠনের দায়িত্ব যে সরকারের, সেটাও সরকারের অজানা নয়।
তিনি বলেন, এটা যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। আমরা প্রক্রিয়া পরিবর্তনে সংস্কার করছি। সেটি নির্দিষ্ট সময়ে হবে। তার আগেই যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে বিদ্যমান আইনে। কেন তথ্য কমিশন গঠন হলো না, সেই প্রশ্নের জবাব সরকারকে দিতে হবে। অনতিবিলম্বে সেই দায়িত্বটা সরকারের পালন করা উচিত। তথ্য কমিশনে এমন ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগ দিতে হবে, যাদের পেশাগত জীবনে আর যাই হোক তথ্য প্রকাশের পরিপন্থি অবস্থান নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য দিতে বাধ্য। এজন্য লড়াই করতে হবে। তারা যে তথ্য দিচ্ছে না, তা প্রকাশিত হতে হবে। যেগুলো ইসিতে থাকে, সেগুলোর সব তথ্যই পাবলিক ইনফরমেশন। তারা এটা দিতে বাধ্য। শুধু ইসি নয়, কোথাও কোথাও হলফনামা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে আইনের পরিপন্থি। আপনারা সক্রিয় হন, তাহলে তথ্য অধিকার কার্যকর করতে হবে।
ভারতে তথ্য অধিকার বিষয়টি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার ব্যক্তি চেয়েছে। আমাদের দেশে এটা আন্দোলনে পরিণত হয়নি। তথ্য চাওয়ার যে পরিসংখ্যান, সেটা অত্যন্ত উচ্চব্যাঞ্জক নয়। যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেগুলো সাধারণ তথ্য। বড় বড় দুর্নীতির তথ্য নয়। আমি চেষ্টা করেছিলাম রিজার্ভ যে চুরি হয়েছিল, সেটার তথ্য জানতে, কিন্তু সেই তথ্য আমাকে দেওয়া হয়নি। বলেছে, এটা তদন্তাধীন। তথ্য অধিকার আইনের বাস্তবায়ন নির্ভর করে নাগরিকদের ওপর।
লিখিত বক্তব্যে মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এমআরডিআই) নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান বলেন, তথ্য কমিশন একটি সাংবিধানিক স্বাধীন সংস্থা হবে এবং এর স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকবে। এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, এর স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করার, অধিকারে রাখার এবং হস্তান্তর করার ক্ষমতা থাকবে। এছাড়া এর নামে মামলা দায়ের করা যাবে বা এর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাবে।
পাশাপাশি তথ্য কমিশনকে কার্যকর রাখতে প্রধান তথ্য কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি যাতে কমিশনে যথাসময়ে নিয়োগ পান, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে।
যোগ্য কমিশন গঠন সম্পর্কে হাসিবুর রহমান বলেন, সংসদ কার্যকর থাকাকালীন অবস্থায় স্পিকার কর্তৃক মনোনীত সরকারি দলের একজন এবং বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য। তবে সংসদ কার্যকর না থাকলে বাছাই কমিটির সভাপতি কর্তৃক মনোনীত একজন বিচারপতি এবং তথ্য অধিকার ফোরাম কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি।
এছাড়া পদ শূন্য হলে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে প্রধান তথ্য কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর তথ্য কমিশনারদের পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুবিধাদি এবং তাদের অপসারণের কারণ ও পদ্ধতি একজন বিচারক অপসারণের নিয়মের অনুরূপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
কালের আলো/এসএকে