এনআইডি রাখতে সরকারকে যা জানাল ইসি
প্রকাশিতঃ 9:04 pm | March 09, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মতো বর্তমান সরকারও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সরিয়ে নিতে চায়। এনআইডি সরিয়ে নিলে কি কি সমস্যা হতে পারে, সেসব বিষয়ে সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে নাসির উদ্দিন কমিশন। মোটা দাগে ইসি জানিয়েছে, অন্যকোনো দপ্তর বা কর্তৃপক্ষের অধীনে নিলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে বলে জানিয়েছে ইসি।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে চলমান রাখা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অভিমত ও সুপারিশ প্রেরণ’ শীর্ষক চিঠি রোববার (৯ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাঠিয়েছেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, এনআইডি কার্যক্রম ইসি থেকে সরিয়ে নিলে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে। এছাড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হবে। তাই এই কার্যক্রমটি ইসির অধীনেই রাখা প্রয়োজন। চিঠিতে ইসি সচিব এনআইডি কর্মকর্তাদের দীর্ঘ ১৭ বছরের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
চিঠির অনুলিপি অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিবকেও দেওয়া হয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন। যার ভিত্তিতে নাগরিকদের দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র। এরপর ২০১১ সালে এসে একটি সমৃদ্ধ তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলে কমিশন। বর্তমানে ইসির এই সার্ভারে সাড়ে ১২ কোটির মতো দেশের নাগরিক এবং ১১ লাখ রোহিঙ্গার তথ্য রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো রোহিঙ্গা বা বিদেশি যাতে ভোটার তালিকায় সম্পৃক্ত না হতে পারে এবং এনআইডি সংগ্রহ করতে না পারে, এজন্য নির্বাচন কমিশন কয়েক ধাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এতে সহজেই ভিনদেশি চিহ্নিত করা যায়। ফলে একদিকে যেমন ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে বিদেশি নাগরিকের অবৈধ কার্যক্রমও রোধ করা যায়। এছাড়া বর্তমানে এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে ১৮০টির মতো প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করে নেয়। ফলে এনআইডি সার্ভার কেবল ভোটার তালিকা নয়, এট জাতীয় নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। আর নির্বাচন কমিশনের মতো স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানই পৃথিবীর একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করে থাকে। এ থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্বও আদায় হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে, আইন বহির্ভূতভাবে। এরপর ২০২৩ সালে এসে নতুন একটি আইনও করে। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেই উদ্যোগ থমকে যায়। পরবর্তীতে কর্মকর্তাদের দাবির মুখে এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন সরকারকে সেই উদ্যোগ বাতিল করার সুপারিশ করলে সরকার তা মেনে নেয়। কিন্তু তার কিছুদিন পরই আবার সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি পৃথক কমিশন গঠন করে এনআইডি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যেই কমিশনের অধীনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন থাকবে।
এই অবস্থায় সম্প্রতি ইসি কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা কর্মবিরতিতে যাওয়ার আল্টিমেটাম দিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন জোরালো মতামত দেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এনআইডি হচ্ছে ভোটার তালিকার বাইপ্রোডাক্ট। এটা তো আগে ছিল না। আগে ভোটার কার্ড ছিল। আস্তে আস্তে যখন ডেভেলপ হলো তখন না এটা হলো। ১৭ বছর ধরে এখানে শ্রম, ঘাম দিয়েছে এখানকার লোকজন। এরাই তো ডেভেলপ করে এই পর্যন্ত এনেছেন। নিজেদের কাজের অতিরিক্ত কাজ হিসেবে এটা করেছে। এটা তো একটা নেটওয়ার্ক সারা দেশে ডেভেলপ হয়েছে, এক্সপার্ট ডেভেলপ হয়েছে। সার্বিক এই বিষয়গুলো নিশ্চয় সরকার বিবেচনায় নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, এনআইডি নিয়ে বারবার একেক সময় একেক রকম সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়। তারা এনআইডি নিয়ে টানা হেঁচড়া করে। এর আগে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছিল, মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখন আবার নতুন কমিশন তৈরি করে তাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, ১৭-১৮ বছর ধরে কোনো সমস্যা হয়নি। আজ এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি যার কারণে এনআইডি ইসি থেকে অন্য কোথাও যাবে। আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সময় দিয়েছি আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করছি। তা না হলে ১৩ মার্চ ইসি সচিবালয়সহ সারা দেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১১ থেকে ১ টা পর্যন্ত মানববন্ধন করবো। তারপরও দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতিসহ আরো কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।
কালের আলো/এসএকে