এমবিবিএস-বিডিএস ছাড়া কেউই ‘ডাক্তার’ নয়: এনডিএফ
প্রকাশিতঃ 9:31 pm | March 09, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। আদালতে চলমান এই সংক্রান্ত সব রিটকে আইন ও জনস্বাস্থ্যবিরোধী উল্লেখ করে আগামী ১২ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি এবং ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক’ নামে বিভ্রান্তিকর কোনো পদবির প্রচলন না করারও দাবি জানায় তারা। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবির প্রতি সমর্থন ও তা বাস্তবায়ন কর্মসূচিতে পাশে থাকার ঘোষণা দেন।
রোববার (৯ মার্চ) রাজধানীর বাংলা মোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে এনডিএফের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘স্বাস্থ্যখাতে চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক’ মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানায় জামায়াত সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠনটি। সভায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় এনডিএফের কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে প্রচুর ষড়যন্ত্র চলছে। প্রতিনিয়তই এই খাতে একের পর এক অস্থিরতা তৈরি করে সমগ্র দেশেই একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির পাঁয়তারা চলছে। এই অবস্থায় দেশ প্রেমিক চিকিৎসকদের ভূমিকা রাখতে হবে। কোনোভাবেই পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের কোনো চক্রান্ত বাস্তবায়ন হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে চিকিৎসকদের অসংখ্য সমস্যা আছে। পুরো স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমটাই সমস্যায় ভরপুর। আগস্টে পরিবর্তনের পর পরই আমাদের কাছে দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর অ্যাক্রেডিটেশনে সমস্যা সংক্রান্ত তথ্য আসলো। বিগত সরকারের সময় বোর্ডে যারা কাজ করতেন, তারা খুব সুচিন্তিতভাবে কোনো ফলাফল বের করে আনতে পারছিলেন না। যাদের দিয়ে কাজ চলছিল, তাদের একজন আমাদেরকে বললেন যে, আপনি উপদেষ্টার কাছে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) পক্ষ থেকে আবেদন করেন। এরপর আমরা উদ্যোগ নিলাম।
তিনি বলেন, আমরা শুরুতেই বলেছি এই অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড পুনর্গঠন করা উচিত এবং এটাকে কার্যকর করা উচিত। বোর্ড পুনর্গঠনের জন্য আমরা আগস্টের শুরুতে একটি চিঠি দিই। শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি। বোর্ড তৈরি হয়েছে এবং তারা একটি ওয়ার্কশপ করেছে।
মাহমুদ হোসেন বলেন, এনডিএফ একটি দায়িত্বশীল সংগঠন। যে কারণে চাইলেই আমরা রাস্তাঘাটে নেমে আন্দোলন করতে পারি না, মানুষকে জিম্মি করতে পারি না। আমরা সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বসেছি, প্রয়োজনে আবারও বসবো। আমরা যেমন চাই আমাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হোক, তেমনি চাই এই সরকার যেন আমাদের মাধ্যমে কোনোরকম সমস্যায় না পড়ে। এই সরকার বিপ্লবী মানুষের সরকার। তাদের সহযোগিতা করাও আমাদের কর্তব্য।
চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা চিকিৎসকদের ৫ দফার সঙ্গে একমত পোষণ করছি। আমরা চাই কোনোভাবেই যেন এমবিবিএস-বিডিএস ছাড়া নিজেদের ডাক্তার পরিচয় না দেয়। তবে আমাদের সমস্যা সমাধানে একটা যৌক্তিক উপায় খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশে এই মুহূর্তে ৩০ হাজারের মতো ম্যাটস থেকে ডিপ্লোমাধারী কাজ করছে, এছাড়াও ৭০ হাজারের মতো তাদের স্টুডেন্ট আছে। সবমিলিয়ে লাখের ওপর মানুষ ম্যাটসের সঙ্গে যুক্ত।
ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, ‘এমবিবিএস এবং বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবেন না—এই আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা রিট করেছি। বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত একানব্বই বার শুনানি হয়েছে, কিন্তু নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আমাদের দাবি, দ্রুতই বিষয়টি নিষ্পত্তি হোক। ম্যাটস থেকে উত্তীর্ণরা অনেক ক্ষেত্রেই অপচিকিৎসা দিচ্ছেন, এটা বন্ধ হোক।
তিনি বলেন, আমরা চাই না ম্যাটস বিলুপ্ত হয়ে যাক। তারা তাদের সীমার মধ্যে কাজ করুক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ম্যাটস আছে, তারা সারা বিশ্বেই চিকিৎসা সহকারী হিসেবেই কাজ করেন। কিন্তু তারা যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে আমরাও নিশ্চয়ই বসে থাকবো না।
কারিকুলাম সংস্কারের দাবি জানিয়ে ডা. জাবির আরও বলেন, ম্যাটসের কারিকুলামটা পুরোটাই গোলকধাঁধাময়। তাদের কারিকুলামে অদ্ভুত কিছু রুলস আছে। তাদের কোর্সটা ছিল এতোদিন তিন বছর। কিন্তু হঠাৎ করেই আন্দোলন করে সেটা চার বছর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা সমসময় দেখি উল্টো আন্দোলন করে কারিকুলাম সংক্ষিপ্তের জন্য। কিন্তু তারা আন্দোলন করে বাড়ানোর জন্য। তারা এখন ইন্টার্নশিপ চাচ্ছে। এসব কার্যক্রম পুরোটাই পরিকল্পিত।
এ সময় চিকিৎসক মহলের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশন অব বাংলাদেশের (ইউমব) চিফ কো-অর্ডিনেটর ডা. মোবারক হোসাইন।
তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো—
১. এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্তগণ ব্যতীত অন্য কেউ নামের পূর্বে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না এবং আদালতে চলমান এই সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সকল রিট আগামী ১২ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বাংলাদেশে ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক’ নামে বিভ্রান্তিকর কোনো পদবির প্রচলন করা যাবে না, যার অস্তিত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বিশ্বের কোথাও নেই।
২. ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসক(এমবিবিএস/বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না’—এই মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৩. আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনঃনির্ধারণ এবং মানহীন সব ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
৪. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।
৫. অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) প্রণয়ন করতে হবে।
কালের আলো/এমডিএইচ