দ্বিতীয় দিনেও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল ঢাবি
প্রকাশিতঃ 6:05 pm | March 10, 2025

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, কালের আলো:
দেশে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে আজ দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ধর্ষকদের প্রকাশ্য শাস্তির দাবি করেন।
সোমবার (১০ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, অপরাজেয় বাংলা, কার্জন হল এরিয়া, শহীদ মিনার প্রভৃতি স্থানে এসব বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ শিক্ষার্থীরা- ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘’উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাংক দ্য র্যাপিস্ট’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট ভূগোল ও পরিবেশ, ব্যাংকিং এন্ড ইনসিওরেন্স, ফার্মেসি, ম্যানেজমেন্ট, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ, পরিসংখ্যান, ইসলামের ইতিহাসও সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রাণিবিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিভাগ ও অনুষদ বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
সমাবেশে নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশ নাগরিক হিসেবে আমরা আমাদের সকল অধিকার চাই, আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। আমরা রাস্তাঘাটে চলার সময় চিন্তা করি কে আমাদের টিজ করছে। আমরা এসব চিন্তা না করে নিরাপদে থাকতে চাই।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি, ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার পেছনে দায়ীদের অতি দ্রুত শাস্তি কার্যকর না করলে ধর্ষণ বাড়তেই থাকবে। প্রতিনিয়ত ধর্ষকের জন্ম নেবে। তারা এসব নিকৃষ্ট কাজ করতে দ্বিধাবোধ করবে না। তাই তাদের প্রকাশ্য শাস্তি কার্যকর করতে হবে যেন অপরাধীরা অপকর্ম করার সুযোগ না পায়।
বিক্ষোভ সমাবেশ ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার বলেন, আমিও একজন আছিয়া। আমারও তো নিরাপত্তা নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নারী শিক্ষার্থীই তো নিরাপদ নয়। যারা ধর্ষক তাদের শুধু ফাঁসি দিলে হবে না, ফাঁসি দিলে আমরা দেখতে পারি না। যত দ্রুত সম্ভব ধর্ষকদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিতে হবে যেমনটা হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। ক্লাস বর্জনের ফলে পড়াশোনার গতি থেমে যাওয়া শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি ধর্ষণ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা দ্রুত সমাধান করার আহ্বান জানান সরকারের কাছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, বিগত দিনগুলোতে ১৫ বছরেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। যদি বিচার নিশ্চিত করা হতো তাহলে এখন এত এত ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না। আমরা ধর্ষকদের ফাঁসি চাচ্ছি এবং উন্মুক্ত স্থানে ফাঁসি চাচ্ছি। আশা রাখছি পরিবর্তিত পরিস্থিতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ষকদের বিচার করবে।
প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার দেশব্যাপী লাগাতার ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে দিনব্যাপী উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা। এদিন ধর্ষকদের প্রকাশ্য শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে ঢাবির লোক প্রশাসন, রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান, পদার্থ, পরিসংখ্যান, ভূতত্ত্ব, ইংরেজি, ভাষা বিজ্ঞান, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ আরও কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসব সমাবেশ থেকে ৩৬টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এর আগে, গত শনিবার মধ্যরাতে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেদিন রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে যোগ দেন৷
কালের আলো/এসএকে