বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরিভিত্তিতে সহায়তা চাইল জাতিসংঘ

প্রকাশিতঃ 11:24 am | March 11, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

মিয়ানমার থেকে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে জরুরিভিত্তিতে আর্থিক সহায়তর আবেদন করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা বিষয়ক অঙ্গসংস্থা ইউএন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)।

তহবিলে টান পড়ায় সম্প্রতি বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কাটছাঁটের পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘ। সেই পরিকল্পনা ঠেকাতেই এ আবেদন জানিয়েছে ডব্লিউএফপি। সংস্থার পক্ষ থেকে ভলা হয়েছে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা অব্যাহত রাখতে হলে আগামী এপ্রিলের মধ্যে আরও ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সহায়তা প্রয়োজন।

বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বাবদ মাথাপিছু ১২ দশমিক ৫০ ডলার জাতিসংঘের কাছ থেকে খাদ্য সহায়তা বাবদ। ডব্লিউএফপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি শিগগিরই সহায়তা না মেলে, তাহলে তহবিল সংকটের কারণে মাথাপিছু সহায়তা ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হবে জাতিসংঘ।

বিষয়টি জানিয়ে ইতোমধ্যে গত বুধবার বাংলাদেশের সরকারকে চিঠিও দিয়েছে ডব্লিউএফপি। সেখানে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত সহায়তা না মিললে আগামী ১ এপ্রিল থেকে সহায়তা কমাতে বাধ্য হবে জাতিসংঘ।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে একযোগে বোমা হামলা ঘটায় সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। সেই হামলার প্রতিক্রিয়ায় আরাকানের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ভয়াবহ অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

সেনা সদস্যদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের মুখে টিকতে না পেরে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে কক্সবাজারের টেকনাফ জেলার কুতুপালংয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে তাদেরকে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান শুরু হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই চলে আসছে। বর্তমানে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

শুরুর দিকে এই রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। পরে এক সময় এই দায়িত্ব নেয় জাতিসংঘ। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের সবাই জাতিসংঘ থেকে খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকেন।

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার বিষয়টি তদারক করে ডব্লিউএফপি; আর ডব্লিউএফপির তহবিলে এতদিন সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। বস্তুত, এই সংস্থার তহবিলের ৮০ শতাংশই আসত যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা প্রদান সংস্থা ইউএসএইড থেকে।

তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি সহায়তা স্থগিতের আদেশের পর থেকে ইউএসএইডের সেই তহবিল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারে সংঘাত তীব্র হওয়ায় গত কয়েক মাসে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন নতুন প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা।

ডব্লিউিএফপির বাংলাদেশ শাখার কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোম স্ক্যাপেলি এক বার্তায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংকট বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দীর্ঘায়িত সংকট। এই শরণার্থীরা পুরোপুরি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তাই খাদ্য সহায়তা কমে গেলে রোহিঙ্গা শিবিরে ক্ষুধা তীব্র হয়ে উঠবে এবং রোহিঙ্গারা তখন এই সংকট থেকে উদ্ধারে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে।”

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

কালের আলো/এসএকে