ঈদে মিলছে না নতুন নোট

প্রকাশিতঃ 10:59 am | March 13, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছরই নতুন নোট বাজারে ছাড়ে। এই সময় নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন টাকাও সংগ্রহ করেন অনেকে। এবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় বাধে আপত্তি। টাকার নকশা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বাদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নোটের নকশায় স্থান পাবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) গুলিস্তানের নতুন টাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে এই বাজারে নতুন টাকার ব্যাপক চাহিদা থাকে, তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। কিছু ব্যবসায়ী নতুন নোটের অল্প কিছু পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ২, ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের। ব্যবসায়ীরা বলছেন— তাদের হাতে যে পরিমাণ নতুন টাকা ছিল, তা এখন প্রায় শেষ। গত বছরের মতো এবারও নতুন টাকার ব্যবসা করতে পারলে, তারা আড়াই শ’ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম।

রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন নোট ও ছেঁড়া টাকার বেচাকেনার অস্থায়ী দোকান আছে। মূলত ফুটপাতেই এ ব্যবসা বেশি চলে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় নতুন নোটের দাম প্রতি বান্ডিলে ১০০ থেকে ২০০ থেকে টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে আসবে না—এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই এই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা মূলত ছেঁড়া ও পুরোনো টাকার ব্যবসায়ী।

ক্রেতাদের অভিযোগ—১০ টাকার এক বান্ডেল নতুন নোট এখন ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যদিও ওই বান্ডেলের মূল মূল্যমান ১ হাজার টাকা। প্রায় ১০০টি নোটের এক বান্ডেল মিলে এই দামের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্রেতা দর-কষাকষি করার পরও দাম কমাতে পারছেন না। এতে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

মো. শামীম নামে এক চাকরিজীবীও বলছেন, ‘বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইবোনদের জন্য নতুন টাকা কেনা আমার দায়িত্ব। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আমি তাদের সেই দাবি পূরণ করতে পারব না। এই অতিরিক্ত দাম দিয়ে কীভাবে নতুন টাকা কিনব?’

শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ‘নতুন টাকার ব্যবসা মূলত ঈদকে কেন্দ্র করেই হয়, এরপরে খুব কম মানুষ নতুন টাকা কিনতে আসে। গত বছর ঈদের সময় নতুন টাকার ব্যবসা করে ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম, কিন্তু এবার নতুন টাকার সংকটের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন সংসার চালানোর জন্য নতুন টাকা বিক্রি করার উপায় নেই।’

সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাংককে চিঠি দিয়ে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করার জন্য বলা হলো। চিঠিতে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে