১৫ জুলাই হামলা ছিল পরিকল্পিত, ঢাবির ১২২ জন শনাক্ত
প্রকাশিতঃ 8:11 pm | March 13, 2025

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, কালের আলো:
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে। ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হামলাকারীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ জন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা গেছে।
এছাড়া অন্তত ৭০ জন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে হামলাকে উসকে দিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা তদন্তে অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় ৮ অক্টোবর একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের পাশে লাউঞ্জে তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণ উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন তুলে দেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি প্রতিবেদনে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
হামলাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণ বলেন, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে একটি বিশেষ ব্যাপার পেয়েছি। অনেকের মতে হতে পারে, এটি একটি সাধারণ মারামারি। কিন্তু ১৫ জুলাইয়ের হামলা ছিল পুরোটাই পরিকল্পিত। সেখানে দুইটি গ্রুপ ছিল সাদা ক্যাপ পরিহিত, একটি গ্রুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে, আরেকটি গ্রুপ ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে। এটি একদিনে হয়নি। আগে থেকে পরিকল্পনা না করা হলে এভাবে সম্ভব না। সরকারি বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী আছে। এটি একদিনে হয়নি।
যেভাবে করা হয়েছে প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের সঙ্গে দেওয়া সংবাদ সংক্ষেপে সত্যানুসন্ধান কমিটি জানায়, অভিযোগকারীরা অভিযোগ দায়েরের সময় যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ জমা দিয়েছিল তার সঙ্গে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কন্টেন্ট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বিচার বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তথ্যানুসন্ধান কমিটি বিচারিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সাক্ষ্যের বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড অনুসরণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করতে সচেষ্ট থেকেছে। নির্দোষ কেউ যাতে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত না হয়, তথ্যানুসন্ধান কমিটি সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক ছিল।
প্রতিবেদনে তারা জানান, ১৫ জুলাইয়ের হামলার নিকৃষ্টতম দিক ছিল নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পথে আহত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আহতদের ওপর হামলা এবং ডাক্তারদের চিকিৎসা প্রদানে বাধা প্রদান। যুদ্ধের সময়ও নারী ও শিশুদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করা হয়।
আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে যুদ্ধের সময় চিকিৎসারত আহতদের ওপর হামলা এবং হাসপাতালে হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কারণে হাসপাতালে এবং নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটি শতাধিক হামলাকারীকে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৫ জুলাইয়ের ঘটনা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, জাতীয় জীবনে এর প্রতিফলন ঘটেছে। এ ঘটনার পরম্পরায় একটি গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস রচিত হয়েছে। তথ্যানুসন্ধান কমিটি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটা প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন। কাজটি করার সময় বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা তদারকি সময় আমরা বিভিন্ন সময় তদারকি করেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে যা চিন্তা করেছি, তা থেকে এ কাজের পরিধি, ব্যাপ্তি ও পদ্ধতিগত জটিলতা অনেক বেশি ছিল।
এটি পদ্ধতিগতভাবে সিন্ডিকেটের কাছে অর্পিত। ফলে এটি সিন্ডিকেটে উন্মোচিত হবে। সত্যানুসন্ধান কমিটি তদন্তের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করেছে। ফলে প্রতিবেদন তৈরি করতে তূলনামূলক সময় লেগেছে। আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের পুলিশের মতো ফরেনসিক বিভাগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য দায়িত্ব পালনের সঙ্গে এটি একটি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এটি সিন্ডিকেট সভায় উঠবে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এরপর তদন্ত কমিটি ও ট্রাইবুন্যাল গঠনের মতো আইনি প্রক্রিয়াগুলো হবে। আমরা এটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা করব।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেসানী, শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ নাসরিন সুলতানা ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদিয়া নেওয়াজ রিমি উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এএএন