ঢাবিতে সেই শিশুর গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল

প্রকাশিতঃ 9:47 pm | March 13, 2025

ঢাবি প্রতিবেদক, কালের আলো:

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। কফিন মিছিল শেষে সেই শিশুর ধর্ষক ও হত্যাকারীসহ দেশের সব ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা পৌনে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে কফিন মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয় শিক্ষার্থীরা।

গায়েবানা জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, ঢাবি শিবির নেতা মাজহারুল ইসলামসহ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্যা রেপিস্ট’,  ‘বিচার বিচার বিচার চাই, খুনীদের বিচার চাই’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁয় নাই’, ‘জুলাইয়ের বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁয় নাই’।

সমাবেশে শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন বলেন, সেই শিশু যে জীবন যুদ্ধ করতে করতে মারা গেছে সেই লড়াইয়ে সে জিততে পারেনি। কিন্তু সেই লড়াইয়ের ভার আজকে আমাদের ওপর দিয়ে গেছে। আমরা যে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছি তার প্রথম দফায় ছিল ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আইনের প্রতি ততক্ষণ শ্রদ্ধা থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত ওই আইন বিচার করতে পারবে। যদি বিচার করতে না পারে তাহলে ওই আইনের খাতা পুড়িয়ে ফেলুন। আমরা প্রকাশ্যে ধর্ষকদের ফাঁসি দেখতে চাই।

সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, আমরা যখন নারী নিপীড়নের বিচার চাইতে রাজপথে নামি তখন আমাদেরকে ট্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়। আমরা এমন বাংলাদেশ চায় যেখানে আর কোনও শিশুকে আর ধর্ষিত হতে হবে না। আমরা আমাদের ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চ থেকে দাবি জানিয়েছি যে ধর্ষণ বিরোধী একটা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার আহবায়ক আবদুল কাদের বলেন, সেই শিশুর হত্যার ন্যায়বিচার আমরা প্রতিষ্ঠা করব, এ বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শিশুর ধর্ষণ এবং খুনের বিচার মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষকের সাহায্যকারীদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

গায়েবানা জানাজা শেষে গণমাধ্যমে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, এ শিশুটির জন্য পুরো জাতি পুরো দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে এ ঐক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর কোনও শিশু এভাবে আর হারিয়ে না যাক। দেশের বিচার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হোক। তার পরিবারকে আল্লাহ হেফাজত করুক। আমরা যার যার জায়গা থেকে তার পরিবারের পাশে দাঁড়াব।

প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। পরদিন তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন শিশুটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

কালের আলো/এসএকে