মতপার্থক্য থাকবে, তবে তা যেন মতবিরোধে পরিণত না হয়

প্রকাশিতঃ 3:06 am | March 16, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা মতপার্থক্যকে স্বাগত জানাই, কিন্তু মতবিরোধ চাই না। আমাদের মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপান্তরিত না হয়।

জাতীয় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ, কবি-সাহিত্যিক, ডাক্তার, সাংবাদিক, গবেষক, ব্যবসায়ী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের অংশীজনদের সম্মানে শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে এ কথা বলেন তিনি।

ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আমরা যার যার জায়গা থেকে দলীয় নীতি, দেশকে গড়ার স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা জাতির সামনে তুলে ধরব। যারটা গ্রহণ করবে, যার প্রতি জাতির ভালোবাসা আস্থা তৈরি হবে, সেই জোটের হাতেই জাতি আগামীতে সেবকের দায়িত্ব তুলে দেবে। এই জায়গায় আমরা সবাই সম্মান প্রদর্শন করি।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ইতোমধ্যে সরকারপ্রধান জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা জাতিকে বলেছেন। আশা করি, অবিলম্বে বিষয়টি তিনি আরও স্পষ্ট করবেন। তাহলে জাতি এ ব্যাপারে আরও আশাবাদী হবে। প্রতিটি দল নিজেদের নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজানোর সুযোগ পাবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে বিশেষ করে সংবিধান এবং সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, তার কতিপয় জিনিস অবশ্যই পরিষ্কার হওয়া উচিত। এ জন্য সবাই একমত। এখানে দলমত–নির্বিশেষে কারও দ্বিমত নেই যে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই। আমরা সবাই বলছি সংস্কারের প্রয়োজন। কতটুকু প্রয়োজন হয়তো সেটা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সংস্কার যে প্রয়োজন এ ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই।

সংস্কারের জন্য বর্তমান সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, যৌক্তিক সময় মানে অযৌক্তিক সময় কাটানো নয়। আবার যৌক্তিক সময় মানে চাপ দিয়ে হুড়োহুড়ি করা নয়। যৌক্তিক সময় হচ্ছে মৌলিক সংস্কারের জন্য যেটুকু সময় প্রয়োজন আমরা সরকারকে সেটুকু সময় দেওয়ার পক্ষে।

২০২৪–এর গণবিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা হাতে ধরা দিয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের মতের ভিন্নতা থাকবে, মতপার্থক্য থাকা—এটা কোনো অপরাধ নয়। বরং এটি একটি গণতান্ত্রিক সমাজের সৌন্দর্য।

ইফতার মাহফিলে যারা শরিক হয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর কোনো ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছর কেটে গেছে, বহুবার ক্ষমতার হাত বদল হয়েছে। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছিলাম তা আজ পূরণ হয়নি। কেন তা পূরণ হয়নি তা বিশ্লেষণের অবকাশ নেই। আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি মিলাতে পারছি না। যারাই ক্ষমতায় গেছে, তারাই নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে অস্থিরতা চলে আসছে। জুলুম নির্যাতন কখনই বন্ধ হয়নি। জাতি অন্ধকার থেকে মুক্তি পায়নি।

মাগুরার ৮ বছরের অবুঝ শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনাকে অত্যন্ত লজ্জা ও বেদনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তার জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। রাষ্ট্র যদি মানুষকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারে তাহলেই মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে। আমাদের দেশে শিক্ষিত লোকের অভাব নেই। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার অভাব রয়েছে। প্রকৃত শিক্ষার অভাবে মানুষ সত্যিকার মানুষ হতে পারছে না। দোয়া করি এ জাতিকে যেন আমরা প্রকৃত নৈতিক শিক্ষা দিতে পারি। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সেই মেরুদণ্ড যদি শক্ত না হয়, তাহলে সেই জাতি কীভাবে শক্ত হবে। এই জন্য জাতিকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। তা হলেই জাতি শক্তিশালী হবে।

তিনি আরও বলেন, জামায়াতের শীর্ষ পাঁচজন নেতাকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছে। আরও ছয়জন নেতাকে কারাগারে বন্দি রেখে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য করেছে। ৫ আগস্টের পরে জাতি মুক্তি পেয়েছে। জেলখানা থেকে অনেকেই মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নেতা আজহার ভাই মিথ্যা মামলায় এখনো জেলখানায় অমানবিক যন্ত্রণা ভোগ করছেন। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়া হোক। আর যেন আইনের মারপ্যাঁচে তাকে বন্দি করে রাখা না হয়। আমাদের আজহারুল ইসলাম ভাইকে অবিলম্বে আমাদের মাঝে যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়, এই কামনা করি।

তিনি অনুষ্ঠানে সম্মানের সঙ্গে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন ও আহত হয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করেন। নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা দান করুন।

ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস, বিএনপি নেতা সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুনির হোসাইন কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ, কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা মুনতাসিম বিল্লাহ মাদানী, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব জনাব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জাগপার চেয়ারম্যান রাশেদ প্রধান, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গণি, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরহাদুজ্জামান ফরহাদ, সারোয়ার কামাল আজিজি, আমির নেজামি ইসলাম পার্টি, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবু হানিফ, মুসলিম জনতা ঐক্য পরিষদের আমির আজিজুল হক আজিজ হবিগঞ্জী, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুসাবিন ইজহার, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির আমির মাও আবু তাহের জিহাদী, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাও শায়েখ কামাল উদ্দীন জাফরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাও মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাও আবু জাফর কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক মাও আশরাফ আলি আকন, বাংলাদেশ আইম্মা পরিষদের মহাসচিব মাওলানা এনামুল হক মুসা, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি পীরজাদা মাও নেসারুল হক, ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল হক, জনসেবা আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ইয়ামিন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি মাওলানা কাজী ইব্রাহিম, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা মুফাজ্জল হোসেন খানসহ অন্যান্য বিশিষ্টজন। এছাড়া সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা, কৃষিবিদ, একাধিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ ইফতার মাহফিলে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল ও অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়ার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, সাইফুল আলম খান মিলন ও মুবারক হোসাইন, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মাদ সেলিম উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আলী হোসেন এবং জামায়াত-শিবিরের শহীদ ও মাজলুম নেতাদের পরিবারের সদস্যগণ এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের বেশ কয়েকটি শহীদ পরিবারের সদস্যগণ ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।

কালের আলো/এসএকে