ন্যায়সংগত শহর গড়ে তুলতে ড্যাপের বাস্তবায়ন সময়ের দাবি
প্রকাশিতঃ 10:54 pm | March 16, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
অন্তর্ভুক্তিমূলক-ন্যায়সংগত শহর গড়ে তুলতে ড্যাপের বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেছে আলোচকরা।
রোববার (১৬ মার্চ) মোহাম্মদপুরে কৈবর্ত সভাকক্ষে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ : হুমকির মুখে ঢাকার বাসযোগ্যতা বিষয়ক মতবিনিময় সভার বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিইং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ১৭৩টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক প্রকাশিত এ তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার বসবাসযোগ্যতা প্রায় তলানিতে। বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে গত ২৩ আগস্ট বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুমোদিত হয়েছে। এতে পথচারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, গ্রিন নেটওয়ার্ক-ব্লু নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নগরবাসীর জন্য মাঠ-পার্ক তৈরি, সড়ককে গণপরিসরে পরিণত করাসহ আবাসন শিল্প বিভিন্ন বিষয়কে বিবেচনায় আনা হয়েছে। একটি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সংগত শহর গড়ে তুলতে ড্যাপ এর বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তা মো. মিঠুনের সঞ্চালনায় আয়োজনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সাধারণ বিবেচনায় বসত এলাকার রাস্তার প্রশস্ততা মানুষের চলাচল ও যানবাহনের যোগাযোগ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ধারণ ক্ষমতার পরিমাপক হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি নগর পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে একটি প্লটের ওপর নির্মিত ভবনের আকার আয়তন কেমন হওয়া উচিত তা শুধুমাত্র প্লট সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততার ওপর নির্ভর করে না।
তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে সেই নগর এলাকার পরিকল্পনা সম্পর্কিত অবকাঠামো ও নাগরিক সুযোগ সুবিধাদি যেমন সড়ক অবকাঠামো, পরিষেবা অবকাঠামো, সামাজিক সুবিধাদি যথা স্কুল, হাসপাতাল, বাজার প্রভৃতি; উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠ, পার্ক, উদ্যান, জলাশয় ও জলাধার; প্রভৃতি সম্যক বিবেচনায় নিয়ে সেই এলাকার ভারবহন ক্ষমতা নির্ণয় সাপেক্ষে সর্বোচ্চ জনসংখ্যা নির্ধারণ করবার মাধ্যমে সেই এলাকার জনঘনত্ব নির্ধারণ করে প্রতি প্লটে কি পরিমাণ পরিবার বা মানুষকে ধারণ করা যেতে পারে সে ব্যাপারে পরিকল্পনার কৌশল ও পন্থা নির্ধারণ করা হয়।
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগে প্রথম ধাপ হিসেবে আবাসন শিল্পকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে।
বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে এখনই সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আবাসন শিল্পের অবনতির পাশাপাশি খেলান মাঠ-পার্ক, নদী-খাল প্রতিটি ক্ষেত্রেই অপরিকল্পিত কাঠামো স্থাপন এবং দখলদারির কারণে প্রতিনিয়ত নগরের মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অবৈধভাবে আবাসন প্রকল্পের আগ্রাসনের অগ্রগতিকে এখনও থামানো না গেলে আগামীতে এই শহর সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে
তারা আরও বলেন, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারমূলকভাবে ২০২ কিলোমিটার সাইকেল লেন নির্মাণের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, যা সাইক্লিস্টদের উপকৃত করবে এবং নগরে অযান্ত্রিক যান প্রাধান্য পাবে। এছাড়াও ঢাকা শহরের অধিকাংশ গণস্থাপনা ও গণপরিসর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বান্ধব নয়। ড্যাপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। অন্যথায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
কালের আলো/এসএকে