ওমরাহ ভিসা টিকিট-হোটেল ভাড়ার তথ্যসহ সৌদি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ: ধর্ম উপদেষ্টা

প্রকাশিতঃ 3:37 pm | March 18, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

ওমরাহ ভিসা পেতে বাংলাদেশের এজেন্সির প্রতিনিধিকে যাত্রীর হোটেল বুকিং ও বিমান টিকিটের তথ্যসহ সৌদি আরবের ওমরাহ এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সচিবালয়ে ওমরাহ ভিসা জটিলতা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন এ কথা জানান।

রমজান শুরুর পরপরই ওমরাহ ভিসা ইস্যুর সংখ্যা একেবারে কমিয়ে দিয়েছে সৌদি সরকার। এতে বিপাকে পড়েছে বিপুল সংখ্যক ওমরাহ যাত্রী ও এজেন্সি।

এ বছর ওমরাহ যাত্রীদের অনেকেই বিমানের টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় কিংবা যথাসময়ে ভিসা না পাওয়ায় ওমরাহ পালন করতে যেতে পারেননি বা যেতে পারছেন না। অনেকে টিকিট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। এতে ওমরাহ যাত্রী ও হজ এজেন্সিগুলো আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন।

উপদেষ্টা বলেন, এদেশের ওমরাহ যাত্রীদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না-এ বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরপরই ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে ভিসা প্রদান কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়। পরে ১৩ মার্চ এ মন্ত্রণালয়ের সচিব ভিসা প্রদান কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতকে একটি ডিও পত্র প্রেরণ করেন। পত্র প্রেরণের পাশাপাশি আমার সচিব ঢাকাস্থ সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে অব্যাহতভাবে টেলিফোনে ও মোবাইলে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

তিনি বলেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত বর্তমানে ছুটিতে দেশটিতে অবস্থান করছেন। ডিও পত্রের বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর তিনি সচিবকে একটি ফিরতি অডিও বার্তা প্রেরণ করেছেন। অডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধ করা হয়নি। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের হজ/ওমরাহ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ওমরাহ যাত্রীদের হোটেল বুকিং বা রিজারভেশন ও এয়ারলাইন্সের টিকিটসহ সৌদি আরবের ওমরাহ এজেন্ট বা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি (রাষ্ট্রদূত) আরও জানিয়েছেন, সৌদি ওমরাহ এজেন্ট/কোম্পানি যদি সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে সেদেশের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রীদের অনুকূলে ভিসা ইস্যুর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধ করা হয়নি বলে সৌদি রাষ্ট্রদূত নিশ্চিত করেছেন, বলেন খালিদ হোসেন।

খালিদ হোসেন বলেন, হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর তথ্য মোতাবেক প্রতি বছর রমজান মাসে বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক এক লাখ ব্যক্তি ওমরাহ পালন করে থাকেন। ওমরাহ ভিসা বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রায় ২০ হাজার ওমরাহ যাত্রী এ বছর রমজান মাসে ওমরা পালনে যেতে পারছে না- হাবের পক্ষ হতে আমাদের এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ওমরা যাত্রীদের টিকিটের অর্থ ফেরত দিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, টিকিট সংগ্রহকারী কোনো যাত্রী ভ্রমণে অনিচ্ছুক হলে বিধি মোতাবেক তার টাকা ফেরত প্রদান করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তারা রমজান মাসে ভিসা না পাওয়ার কারণে যারা ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যেতে পারবেন না তাদের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক ঈদুল ফিতরের পরে এবং আগামী জুলাই মাসে ওমরাহ পালনের সুযোগ রেখে টিকিট পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে।

হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সারওয়ার বলেন, সৌদি আরবের পাঁচ লাখ লোক ওমরাহ করতে পারবে সেখানে, এরই মধ্যে সাড়ে চার লাখ চলে গেছে। আর হয়তো ৫০ হাজার মানুষ ভিসা পাবে। সেখানে বাংলাদেশ ৪-৫ হাজার পেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ করতে যেতে ইচ্ছুক ২০ হাজার। সৌদিয়া এয়ারলাইন্স যেন আমাদের টিকিটের টাকা রিফান্ড করে দেয়। এখন টিকিটের দাম এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু হজের পরে যখন আমরা ওমরায় যাব, তখন টিকিটের দাম হবে ৭৫ হাজার টাকা। এই যে ব্যবধান হচ্ছে সেই টাকাটার কী হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাজি হলেও সৌদি আরব এখনও টাকা রিফান্ডে রাজি হয়নি।

হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, সৌদি আরব ভিসা ইস্যু প্রক্রিয়া এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, এটি বন্ধের কাছাকাছি। আমরা ১০০ পাসপোর্ট সাবমিট করলে একটি বা দুটি ভিসা পাচ্ছি।

তিনি বলেন, এখন যে অনলাইন ফরমেটে আমরা ভিসা আবেদন করি সেখানে হোটেল ও টিকিটের তথ্য দিতে হয়। না দিলে ভিসা আবেদন সাবমিট করা যায় না। এভাবে আবেদন করার পরেও আমরা প্রতিনিয়ত রিফিউজ হচ্ছি। তাই রাষ্ট্রদূতের যে তথ্য, সেটার সঙ্গে একটু ঘাটতি আছে।

‌‘সৌদি এয়ারলাইন্স এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অনেকগুলো এয়ারলাইন্স ওমরা যাত্রী বহন করে থাকে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন ছাড়া বাকি বিমান সংস্থাগুলো টিকিটের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করছেন’ বলেও দাবি করেন হাব মহাসচিব।

ফরিদ আহমেদ আর বলেন, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স বলছে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে জুলাইয়ে ডেট চেঞ্জ করার জন্য। তখন ভিসা চালু না হলে আরও ১৬ হাজার টাকা দিয়ে পরবর্তীতে নিতে হবে। এখন এবং ওই সময়ের টিকিটের দামের ব্যবধানের কারণে তারা চালাকি করে টাকা রিফান্ড না করে তারিখ পরিবর্তনের কথা বলছে। আমরা মনে করি যাদের যাত্রা বাতিল হবে তাদের সব এয়ারলাইন্স থেকে টাকা রিফান্ড হওয়া উচিত।

ধর্ম সচিব এ কে এম আলতাব হোসেন প্রামানিক এজেন্সি মালিকদের বলেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত যেভাবে বলেছেন সেই অনুযায়ী আপনারা আবেদন করুন। এরপরও যদি ভিসা ইস্যু করা না হয়, তবে এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রদূতকে যুক্ত করব।

একইসঙ্গে হোটেল বুকিং ও বিমান টিকিটের তথ্য দিয়ে কি পরিমাণ ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে হাবকে সেই তথ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সচিব।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গেও টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম সচিব।

কালের আলো/এএএন