গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল: ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ

প্রকাশিতঃ 10:57 am | March 20, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:

পবিত্র রমজান মাসে দখলদার ইসরায়েলের গাজায় চালানো নির্বিচার হামলায় দুদিনে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত মঙ্গলবার থেকে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে ইসরায়েলকেই অভিযুক্ত করেছে ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ। প্রভাবশালী এই সংবাদপত্রটি বলেছে, হামাস নয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।

বুধবার (১৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ বুধবার গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে অভিযুক্ত করেছে। হারেৎজ তার একটি সম্পাদকীয়তে বলেছে, “চুক্তি বাস্তবায়ন এবং জিম্মিদের ফিরে আসার পথে  — হামাস নয় — বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।”

গত মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে একদিনেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৪০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে, শত শত আহত করেছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তিও ভেঙে দিয়েছে।

ইসরায়েলি সরকার দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি বাড়ানো এবং ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার সমস্ত প্রস্তাব হামাস “বারবার” প্রত্যাখ্যান করার কারণে নতুন করে এই হামলা করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ বলছে, “কিন্তু আমাদের জোরে এবং স্পষ্টভাবে বলা উচিত যে— এটি একটি মিথ্যা। হামাস নয়, ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।”

এতে আরও বলা হয়েছে, “১৬তম দিনে সংঘাতের পক্ষগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করার কথা ছিল, যা বাকি সমস্ত জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।”

হারেৎজ বলেছে, যুদ্ধবিরতির ৪২তম থেকে ৫০তম দিনের মধ্যে গাজা ও মিসরের সীমান্তে ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করেছে ইসরায়েল।

সংবাদপত্রটি বলছে, “তাছাড়া, ইসরায়েল ঘোষণা করেছে যে— তারা গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশ বন্ধ করে দিচ্ছে এবং সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিচ্ছে। জ্বালানিমন্ত্রীর গাজায় ইসরায়েলের সীমিত পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্তের মতো এই সিদ্ধান্তও চুক্তিতে ইসরায়েলের দেওয়া প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। কারণ চুক্তিতে বলা হয়েছিল— দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা যতক্ষণ চলমান থাকবে ততক্ষণ সাহায্য প্রবেশ অব্যাহত থাকবে।”

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ মার্চের শুরুতে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু নেতানিয়াহু চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য আলোচনায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এর পরিবর্তে তিনি চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ আরও বাড়াতে চান বলে জানানো হয়।

তবে হামাস এই শর্তে এগিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী মেনে চলতে হবে এবং অবিলম্বে চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য আলোচনা শুরু করতে হবে, যার মধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধ চূড়ান্তভাবে বন্ধের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এছাড়া মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর সমস্ত প্রস্তাব হামাসের প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে নেতানিহুর করা দাবিরও সমালোচনা করেছে হারেৎজ।

প্রভাবশালী এই ইসরায়েলি সংবাদপত্রটি বলছে, “উইটকফের কাছ থেকে হামাস যে সমস্ত প্রস্তাব পেয়েছিল তার মূল বিষয় ছিলো— ইসরায়েল চুক্তির অংশ মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলস্বরূপ, যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার কারণ হিসেবে উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানকে হামাসের প্রত্যাখ্যান দেখানোর প্রচেষ্টা একটি অসৎ কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।”

এছাড়া গাজায় নতুন করে আক্রমণ চালানোর উদ্দেশ্য ছিল জিম্মি, জীবিত এবং মৃতদের মুক্তি দেওয়া বলে নেতানিয়াহু যে দাবি করেছেন সেটিকেও আরেকটি মিথ্যা বলেও নিন্দা জানিয়েছে হারেৎজ। সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, “এটি আরেকটি মিথ্যা। সামরিক চাপ জিম্মিদের জন্য এবং অবশ্যই ইসরায়েলি সৈন্য এবং গাজার বাসিন্দাদের জীবনকেও বিপন্ন করে, একই সাথে ভূখণ্ডের অবশিষ্টাংশও ধ্বংস করে।”

কালের আলো/এসএকে