রমজানে ক্রেতার নাগালে খাদ্যপণ্য
প্রকাশিতঃ 11:04 am | March 20, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নতুন নয়। রমজান শুরুর কয়েক মাস আগেই মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিছু স্বার্থান্বেষী ও অসাধু ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্যের কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয় না। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। সবজি, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে খেজুর, শসা, ছোলা, চিনিসহ সব রকমের খাদ্যপণ্য ক্রেতার নাগালের মধ্যে।
বাজার মনিটরিং ও বিশেষ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থার ফলে বাজার দুষ্টচক্র মুক্ত করতে সম্ভব হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চলতি বছর রমজানকে সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে। সরকারের এমন পদক্ষেপ জনমনে স্বস্তি ফেলেছে।
শুধুমাত্র ক্রেতাদের মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন তেলের চাহিদা বাড়লেও বাজারে এর সরবরাহে ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। আবার ক্রেতাদের অভিযোগ, অধিক লাভের আশায়ই তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। খোলা সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক দেখা গেলেও কিনতে গিয়ে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। যদিও এখন ক্রমশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানে বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে এবছর সরকার অগ্রিম কর অব্যাহতি, কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমিয়ে শুল্কায়ন করেছে। ফলে খেজুরসহ বেশ কটি পণ্যের আমদানি দ্বিগুণ হয়েছে। এতে দাম কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই বছর রান্নার অন্যতম অনুষঙ্গ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে মিলছে পেঁয়াজ, যা গত কয়েক বছরে কল্পনাও করা যেত না। বিগত বছরগুলোতে পেঁয়াজের দাম ৭০-৮০ টাকার নিচে ছিল না। গতবছরই রোজায় পেঁয়াজের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। বেগুনের কেজি ছিল ১০০ টাকা যা এই বছর ৭০-৮০ টাকা। গত বছর টমেটোর কেজি ছিল ৫০-৬০ টাকা, যা এই বছর ৩০-৪০ টাকা। গত বছর শশার কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা এই বছর ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া মুরগি ব্রয়লার ২১০ টাকা, লেয়ার ৩৩০ টাকা, সোনালী ৩০০ টাকা, দেশি ৬৬০ টাকা ও হাঁস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।
জানা যায়, বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা ও নৈতিকতার উন্নয়ন। বাজারে প্রয়োজনীয় সরবরাহ রয়েছে। কোথাও কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বাজার মনিটরিংয়ের পরিধি বাড়িয়েছে। এছাড়া রমজান সামনে রেখে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ পর্যবেক্ষণ কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। এতে করে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাও এ বিষয়ে জোর দেওয়ায় গত ১০ বছরের চেয়ে বাজামূল্য স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন ক্রেতারা। তবে বাজার পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকুক এবং রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকুক, এটিই প্রত্যাশা তাদের।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, দুই একটা পণ্যে অস্থিরতা থাকলেও এই বছর অনেক পণ্যেরই দাম কমেছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম অনেকটাই কমেছে। ফলে বাজারে এর সুফল পড়েছে। তারপরও কিছু পণ্যে অস্থিরতা রয়েই গেছে। এই বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।
কালের আলো/আরআই/এমকে