সঞ্চয় বেড়েছে ‘খুদে’ শিক্ষার্থীদের
প্রকাশিতঃ 11:32 am | March 20, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বড় প্রভাব পড়ে স্কুলশিক্ষার্থীদের সঞ্চয়েও। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়। তবে গত ডিসেম্বরে কিছুটা উন্নতি হয়েছে স্কুল ব্যাংকিংয়ে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকের ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মানসিকতা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১০ হাজার ৪৩৯টি নতুন স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী আগের প্রান্তিকের তুলনায় স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ০.২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশজুড়ে স্কুল ব্যাংকিং সম্মেলন ফের শুরু হওয়ার কারণে এই বৃদ্ধি ঘটেছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাসে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে দেশের সব শিক্ষার্থীর মোট আমানত ছিল দুই হাজার ৮৭ কোটি টাকা এবং নভেম্বরে কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে আমানত কমলেও ডিসেম্বরে এসে কিছুটা বেড়েছে।
সম্প্রতি স্কুল ব্যাংকিং নীতিমালার আওতায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করতে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর ও ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বরের দুটি সার্কুলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আর্থিক সেবার সঙ্গে পরিচিত করানো এবং শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে অধিকতর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রতিটি তফশিলি ব্যাংক শাখার নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্কুল ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনয়নের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে কার্যরত সব তফশিলি ব্যাংককে তাদের প্রতিটি শাখার নিকটবর্তী কমপক্ষে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং সেবাসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ নীতির আওতায় কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।’
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জেলা বা উপজেলা অথবা ইউনিয়ন পর্যায়ে কমপক্ষে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনপূর্বক প্রতিটি তফশিলি ব্যাংক শাখাকে তাদের নিকটবর্তী শাখার মাধ্যমে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি সেই ব্যাংক শাখা থেকে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা বা পরিষেবা গ্রহণ করার সুযোগ পাবে।
শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা। ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। এর পরের বছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে এক লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসছে। এর পর থেকেই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
এ পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এই অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন-সব ধরনের ফি ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। মাত্র ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
কালের আলো/এমডিএইচ