বরিশালে নাহিদের সামনেই এনসিপির মতবিনিময়ে হট্টগোল
প্রকাশিতঃ 2:42 am | March 21, 2025

বরিশাল প্রতিবেদক, কালের আলো:
বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময়ে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় মিলনায়তন থেকে বের হন নাহিদ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইফতারের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেন নাহিদ ইসলাম। এসময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ এবং জেলা কমিটির সদস্য সচিব এস এম ওয়াহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন সাধারণ কর্মীরা। এ নিয়ে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে মতবিনিময়ের বৈঠক। শুরু হয় তর্কবিতর্ক। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
বিবদমান পক্ষগুলো নাহিদ ইসলামের সামনেই মারামারি শুরু করে। তখন মাইকে সবাইকে সংযত হতে বললেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারা যায়নি।
ছাত্র নেতারা বলেন, নাহিদ ইসলাম বাধা উপেক্ষা করে দোতলা থেকে নিচে নামলে বরিশাল ক্লাবের মূল গেট আটকে সাধারণ কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এসময়ে অনেককে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতেও শোনা যায়।
হৃদয় নামে এক ছাত্র বলেন, বরিশাল জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধী কমিটিতে যারা আছেন তারা বিভিন্ন অন্যায় করেছেন। তারা ছাত্র পরিচয় দিয়ে ফায়দা নিয়েছেন। আমরা আজকে তাদের নৈরাজ্য দলীয় প্রধানের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি দেখে আমাদের বাধা দিয়েছে। আমরাও গেট আটকে দাবি জানিয়েছি। আমাদের কথা শুনতে হবে নাহিদ ভাইকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির নেতা জোবায়ের কাইয়ূম বলেন, ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ ভাই, ওয়াহিদুর রহমান ভাই নিজেদের মতো করে সংগঠন চালান। যেকোনো কাজ তারা নিজেদের মতো করে চালান। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা কেউ কোনো বেনিফিট পেত না। যেকোনো কাজ নিজেরা কোরাম করে লেনদেন করত। আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আছি, আমরা সবসময়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্প্রিট ধারণ করি। আমরা অন্যায়ের আশ্রয় দেব না।
তিনি আরও বলেন, এই দ্বন্দ্বটা অনেকদিন আগে থেকেই চলে আসছিল। বৈষম্যবিরোধীদের যে গ্রুপ (মেসেঞ্জার/হোয়াটসঅ্যাপ) আছে সেখানে আমরা প্রতিবাদ জানালে তারা আমাদের বের করে দেন। আমাদের বিভিন্নভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। আজকের ঘটনা হচ্ছে নাহিদ ভাই আসার পরে আমরা তার সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলতে চেয়েছিলাম।
‘আমাদের যুগ্ম আহ্বায়ক যারা ছিলেন জুবায়ের ভাই, সুমি আপু নাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে বরিশালে কি পরিস্থিতি চলছে তা জানানোর জন্য চেষ্টা করেছিলাম। নাহিদ ভাই আমাদের সাথে কথা বলতে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু শাহেদ ভাই ও ওয়াহিদুর রহমান ভাই আমাদের নাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলতে দিচ্ছিল না। শাহেদ ভাইয়ের অনুসারী ইয়াসিন ভাই এসে জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সুমি হক আপুর সাথে হাতাহাতিতে জড়ান। তখন আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। পরে আর নাহিদ ভাইয়ের সাথে আমরা কথা বলতে পারিনি।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরেক কর্মী রিয়ন বলেন, কেন্দ্রের নেতৃবৃন্দ সাধারণ কর্মীদের সাথে কোনো কথা বলেন না। তারা হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে শুধু আহ্বায়ক সদস্য সচিবের সাথে কথা বলেন। সাধারণ কর্মীদের তারা মূল্যায়ন করেন না। আমরা আজকে শুধু ৫ মিনিট সময় চেয়েছিলাম কথা বলার। কিন্তু বরিশালের আহ্বায়ক, সদস্য সচিবরা তা বলতে দেয়নি। কথা বলতে দিলে তাদের অপকর্ম ফাঁস হয়ে যেত।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ গণমাধ্যমকে বলেন, অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা করতে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে নাহিদ ইসলামকে অপমান করেছে। এর প্রতিবাদে আমরা নগরীতে বিক্ষোভ করেছি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের টহল টিম বরিশাল ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় ছিল। হট্টগোল শুনে সেখানে গিয়ে দেখে ক্লাবের মূল ফটক আটকে রেখেছে কিছু নেতাকর্মী। পরে পুলিশ গেট খুলে দিলে নাহিদ ইসলামকে বহনকারী গাড়িসহ মোট তিনটি গাড়ি নিরাপদে বেড়িয়ে যায়।
কালের আলো/এসএকে