বাংলাদেশে রাজনীতি রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: বাংলা একাডেমির সভাপতি

প্রকাশিতঃ 4:43 am | March 22, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশে রাজনীতি কেবল রাজনৈতিক দল ও নেতাদের নিয়ন্ত্রণে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতিতে বরং সিভিল সোসাইটি এবং এনজিওগুলোর প্রভাব ক্রমশ বেড়েছে। এনজিওরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ করলেও সিভিল সোসাইটি মূলত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি হিসেবে কাজ করে। বর্তমান সরকারও সিভিল সোসাইটি দ্বারা প্রভাবিত। ফলে প্রচলিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব কার্যত বিলুপ্ত হয়েছে, যা পুনর্গঠিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

শুক্রবার (২১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি আয়োজিত ‘রাজনীতি কী এবং কেন?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘বর্তমানে যে নীতি চলছে, তাকে আর রাজনীতি বলা যায় না; বরং নতুন কোনও শব্দ দিয়ে এটাকে চিহ্নিত করা উচিত। সাধারণ মানুষের রাজনীতির প্রতি কোনও আগ্রহ নেই, বরং তারা একে ঘৃণা ও ভয়ের চোখে দেখেন। রাজনৈতিক নেতাদের তারা সম্মান করেন না, বরং ভয়ে সালাম দেন। অথচ সম্মান ও ভয়ের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধের পর আজ পর্যন্ত একজন প্রকৃত জাতীয় নেতাও পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নেতা হতে হলে যে গুণাবলির দরকার, তা আমাদের বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে অনুপস্থিত। এখন রাজনীতি যেন কেবল ক্ষমতা ও সম্পদ লাভের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক শাসন এসেছে প্রধানত রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতার কারণে। কেবল মিলিটারি ক্ষমতার লোভে শাসন নিয়েছে— এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয়। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস বারবার সংকট ও বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই দেখা যায়, রাজনীতি আর জনসেবার মাধ্যম থাকেনি, বরং পার্লামেন্ট সদস্য ও মন্ত্রী হয়ে সম্পদ গঠনের সুযোগে পরিণত হয়েছে।

বাংলা একাডেমির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন করা উচিত— যেসব নেতা সংসদ ও মন্ত্রিসভায় রয়েছেন, তাদের প্রতি জনগণের সত্যিকারের শ্রদ্ধা আছে কি? তারা কি জনগণের জন্য কোনও ভালো কাজ করছেন? এদের লক্ষ্য ও অভিপ্রায় কী? বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার দল থেকে যারা নেতৃত্বে এসেছেন, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? তাদের নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা কী ছিল?’

তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনি বিভিন্নভাবে, নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। খালেদা জিয়ার অবস্থাও একইরকম। তবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের চেষ্টা করেননি। তিনি তুলনামূলক সরল জীবনযাপন করতেন। কিন্তু তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, সম্পদ অর্জনের প্রতি আগ্রহ ছিল। পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের মূল লক্ষ্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন অর্থ ও সম্পদ গঠন করা, যা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে পারে।’

শেখ হাসিনার শাসনামলের প্রসঙ্গ টেনে ফজলুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ এই শাসনামলে আওয়ামী লীগ সীমাহীন সম্পদের মালিক হয়েছে। এটি আর রাজনীতি নেই, বরং অন্যকিছু হয়ে গেছে। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান যে নীতিতে চলতেন, তার দলে সেই নীতির অস্তিত্বও আর নেই।’

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক এম এ আলীম সরকারের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য বিজন হাওলাদার। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউসেট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী, শামীম ইশতিয়াক চৌধুরী প্রমুখ।

কালের আলো/এমডিএইচ