এভারেস্ট-লোৎসের পর এবার বাবরের অভিযান অন্নপূর্ণায়

প্রকাশিতঃ 3:48 pm | March 22, 2025

চট্টগ্রাম প্রতিবেদক, কালের আলো:

এভারেস্ট ও পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো চট্টগ্রামের সন্তান বাবর আলী এবার যাচ্ছেন পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত অন্নপূর্ণা-১ অভিযানে। সোমবার (২৪ মার্চ) অভিযানের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন তিনি।

শনিবার (২২ মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাবর আলী এ ঘোষণা দিয়েছেন।

গত বছরের ১৯ মে এভারেস্ট জয় করেন পেশায় চিকিৎসক বাবর আলী। দু’দিন পর ২১ মে নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে তিনি ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার লোৎসে চূড়া স্পর্শ করেন। বাবর প্রথম বাংলাদেশি, যিনি পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে জয় করেছেন।

এবার বাবরের লক্ষ্য নেপালে গণ্ডকী প্রদেশে ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ অভিযান। পর্বত গাত্রের খাড়া ঢাল, তুষারধসের প্রবণতা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া-এই তিন মিলে ভয়ানক এ পর্বত। তবুও বরাবরের মতো জয়ের অদম্য নেশা বাবরের, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি হিসেবে অন্নপূর্ণা-১ এর শৃঙ্গ ছুঁতে যান। শুধু এ পর্বতশৃঙ্গ নয়, বিশ্বে মোট ১৪টি আট হাজার মিটারের পর্বত আছে, যার সবগুলোই জয়ের ইচ্ছা তার।

বাবর আলী বলেন, ‘এভারেস্ট-লোৎসে অভিযানের পর থেকেই বিশ্বের ১৪টি আট হাজার মিটার পর্বত আরোহণের ইচ্ছা পোষণ করছি আমি। অন্নপূর্ণা-১ অভিযান সে লক্ষ্যের দিকে আরও একটি পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে বাকি পর্বতগুলোর চূড়া ছুঁতে চেষ্টা করব। তবে অন্নপূর্ণা-১ অভিযান নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। সামিটের সঙ্গে পর্বতে প্রাণ হারানো আরোহীদের অনুপাত লক্ষ্য করলেই এই পর্বতের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ধারণা করা যায়।’

‘বেশিরভাগ পর্বতারোহীই বিশ্বের উঁচু সব পর্বতে দেশের পতাকা হাতে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমি সবসময় চ্যালেঞ্জিং আর নতুন কিছু করতে পছন্দ করি বলেই অন্নপূর্ণা-১ এর মতো শৃঙ্গ বেছে নিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৪ মার্চ অভিযানের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন বাবর। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানান সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারা হয়ে তাতোপানির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তিনি। চারদিনের ট্রেক শেষে পৌঁছাবেন অন্নপূর্ণা নর্থ বেস ক্যাম্পে। মূল অভিযান শুরু হবে সেখান থেকেই।

বেস ক্যাম্প থেকে উপরের ক্যাম্পগুলোতে ওঠানামা করে শরীরকে অতি উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবেন এই পর্বতারোহী। পুরো অভিযানে সময় লাগবে প্রায় চল্লিশ দিন।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহ কিংবা শেষ সপ্তাহে চূড়ায় আরোহণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান।

অনুষ্ঠানে ক্লাবের বর্তমান সভাপতি ফরহাদ জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের উপদেষ্টা শিহাব উদ্দীন এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল নিটওয়ারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল। এবারের অভিযানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বাবরের পাশে দাঁড়িয়েছে ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল। অনুষ্ঠানের শেষে বাবরের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, বাবর সফলভাবে অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গে আরোহণ করতে পারলে এটি হবে তার তৃতীয় আট হাজার মিটারি পর্বত।

৩৩ বছর বয়সী বাবর আলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামের নজু মিয়া হাট এলাকায়। বাবা লিয়াকত আলী কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। ২০১৭ সালে দেশে ফিরে বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। মা লুৎফুন্নাহার বেগম গৃহিণী। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে বাবর দ্বিতীয়।

বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে এমফিল ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিজিটি সম্পন্ন করেন।

ছোটবেলা থেকেই দূরন্ত প্রকৃতির বাবর কিছুদিন চিকিৎসা পেশায় থাকলেও পরিভ্রমণের নেশায় সেটা ছেড়ে দেন। ২০১৯ সালে পায়ে হেঁটে ও পরে সাইকেলে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেন। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছিলেন বাবর আলী। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী গিয়ে থামেন তিনি।

এভারেস্ট জয়ের আগে আরও অনেক পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন বাবর। ৪ হাজার ৯৮৪ মিটার উচ্চতার সারগো রি থেকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার মাউন্ট আমা দাবলাম– আরও অন্তঃত ৯টি পর্বতশৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড আছে বাবরের ভাণ্ডারে।

কালের আলো/এএএন