বিটিভি ও বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার সুপারিশ

প্রকাশিতঃ 5:48 pm | March 22, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারের স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। সুপারিশ অনুযায়ী, একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ বা সম্প্রচার সংস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান দুটি চলবে। এর ফল এখানে শুধু সরকারের দৃষ্টি ভঙ্গিই নয়, বহুমত বা ভিন্নমতের প্রতিফলন থাকার সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা এতদিন ছিল না।

শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ।

পরে তিনি যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, সাংবাদিকতার পথে বাধা তৈরি করে এমন যেসব আইন ও সরকারি নীতিমালা রয়েছে সে সম্পর্কে সুপারিশ দিয়েছি। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রস্তাব রেখেছি। এমনকি আমরা আইনটি কেমন হতে পারে তার জন্য একটি খসড়া অধ্যাদেশ যুক্ত করে দিয়েছি। উপমহাদেশে পাকিস্তান ও ভারতে এমন আইন পার্লামেন্টে বিবেচনাধীন রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে এই আইন করেছে। সেখানে চাইলেও সাংবাদিকের ফোন তল্লাশি করতে পারে না সরকারি বেসরকারি কেউ।

টেলিভিশনের আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবকটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনের আবেদন দেখছি, কোথাও জনগণের কথা বলা হয়নি। সবাই সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে চেয়েছে, ইতিবাচক সংবাদ-কন্টেন্ট দেখাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সারা দুনিয়ার স্ট্যান্ডার্ড দেখেছি আমরা। সে অনুযায়ী সুপারিশগুলো করা হয়েছে।’

বিটিভি ও বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের স্বায়ত্তশাসনের সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এই দুটি সংবাদ মাধ্যম চালাবে। এর জন্য একটি সম্প্রচার সংস্থা করার কথা বলেছি।

কামাল আহমেদ আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে দেওেয়া যাবে না। সাংবাদিকের কাজ সাংবাদিকতা করা।’

ডিএফপির মিডিয়া তালিকায় বিস্তর সমস্যার কথা তুলে ধরেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনে ঢাকায় এক কোটি ৫১ লাখ পত্রিকা ছাপা হয়েছে সরকারি হিসাব মতে। কিন্তু বাস্তবে ১০ লাখের বেশি হবে না। তাহলে এই এক কোটি ৪১ লাখ পত্রিকার হিসাব কেন এলো। সরকারি বিজ্ঞাপন নেওয়ার জন্য এসব কারসাজি করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ডিএফপির তালিকায় ছয়শোর বেশি পত্রিকা রয়েছে, অথচ ৫২টি পত্রিকা বিক্রি হয় ঢাকায়। দুটি প্রতিষ্ঠান সংবাদপত্র সরবরাহের কাজ করে ঢাকায়। তাদের হিসাব দেখলেই অনায়াসে এই তথ্য পাওয়া যায়।’

সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে করপোরেট ট্যাক্স প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে বলে তিনি জানান। বলেন, এতে পরিচালনা ব্যয় অনেক কমে আসবে। মিডিয়া শিল্পে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে, যা গণমাধ্যমগুলোর টিকে থাকার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, অধ্যাদেশের খসড়াসহ ১৮০ পাতার পুরোটা অনলাইনে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যে কেউ চাইলে দেখতে পারবেন কী কী সুপারিশ করা হয়েছে।

এসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদকে প্রধান করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রতিবেদন জমার সময় দেওয়া হয় কমিশনকে। ১০ দিন হাতে রেখেই প্রতিবেদন জমা দিল কমিশন। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এএএন