‘হাসিনার ওপর ভারতের পর্যাপ্ত প্রভাব না থাকায় কিছু করার সুযোগ ছিল না’
প্রকাশিতঃ 11:09 am | March 23, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে সেখানে হাসিনাবিরোধী গণবিক্ষোভ তৈরি হওয়ার বিষয়টি ভারত জানত বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। কিন্তু শেখ হাসিনার ওপর ভারতের পর্যাপ্ত প্রভাব না থাকায় তেমন কিছু করার সুযোগ ছিল না বলে মন্তব্য করেন তিনি। জয়শঙ্কর বলেন, ভারত কেবল তাকে ‘পরামর্শ’ দিতে পেরেছিল।
শনিবার (২২ মার্চ) পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শক কমিটিতে এ তথ্য জানান তিনি। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান—এই প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ওপর খোলামেলা আলোচনা হয় এই বৈঠকে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে,জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ভারতসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার বিষয়ে অবগত ছিল। এই প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্য উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি বলেন—আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিল, যেন তারা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাতে না জড়ায়। অন্যথায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিষিদ্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে সংলাপ শুরু করলেও শেখ হাসিনাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ায় দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। ভারত এরই মধ্যে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রিকে ঢাকায় পাঠায়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে সফর করলেও, এপ্রিলের ২ থেকে ৪ তারিখে ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য বিমসটেক (বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে কিনা, তা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কিছু জানায়নি।
অন্যদিকে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস একাধিক আন্তর্জাতিক নেতাকে ঢাকায় স্বাগত জানানোর পর এবার চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেখানে চীন-বাংলাদেশের মধ্যে বিমান চলাচলসহ আরও কয়েকটি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং চীনের বিভিন্ন শহরের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করবে। জয়শঙ্কর এই প্রেক্ষাপটে ‘বাহ্যিক শক্তির’ ভূমিকা উল্লেখ করে বলেন, চীন ভারতের ‘প্রতিপক্ষ নয়, প্রতিযোগী’।
সার্কের ভবিষ্যৎ
জয়শঙ্করের আলোচনায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর ভবিষ্যতও উঠে আসে, যার সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে ১৯তম সার্ক সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও, ভারতের একটি সামরিক ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে ভারত এতে অংশগ্রহণ বাতিল করলে তা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর থেকে ভারত বিমসটেককে প্রাধান্য দিয়ে আসছে, যা সার্কের পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘সার্ক এখনো বাতিল হয়নি, বরং এটি বিরতিতে আছে।’ এর মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যতে সার্কের পুনরুজ্জীবনের ইঙ্গিত দেন।
বৈঠকে ভারতীয় এমপিরা মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং নেপালে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়টিও তুলে ধরেন এবং আগামী দশকে চীনকে মোকাবিলায় ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান।
সূত্র: দ্য হিন্দু।
কালের আলো/এএএন