চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব সরকারের

প্রকাশিতঃ 11:18 am | March 23, 2025

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রায় ৬ মাস আগে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেই সময় তিনি ড.ইউনূসকে ‘চীনের জনগণের পুরানো বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। চলতি সপ্তাহেই বেইজিং সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এই সফরকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। অন্য দেশগুলোকে বিভিন্ন ধরনের বার্তা দেওয়ার জন্য চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চায় তাঁরা। পাশাপাশি বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার, চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পানি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশও। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সম্প্রতি গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য বেইজিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে। আমরা চীনের কাছ থেকে আরও বিনিয়োগ চাই এবং সেখানে আমাদের পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।’

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, উন্নয়ন সহযোগিতাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের কাছে চীনের গুরুত্ব রয়েছে। একই সঙ্গে অন্যদেশগুলোকে বিভিন্ন ধরনের বার্তা দেওয়ার জন্যও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দরকার বাংলাদেশের। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের অবস্থানের বিষয়ে বাংলাদেশের পরিষ্কার ধারণা আছে। বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করা হলে অন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলো কি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, সেটি আমাদের বিবেচনায় আছে।’

তিনি বলেন, ‘স্ট্র্যাটেজিক সভরেইনটি বা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সার্বভৌম অধিকার বাংলাদেশের আছে। একই সঙ্গে চীনের বিষয়ে বাংলাদেশ কেন এবং কী প্রেক্ষাপটে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটি অন্য দেশগুলোকে বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যাখ্যা করারও প্রয়োজন রয়েছে।’

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে এই সফর ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার, চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এবং স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পানি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।

অন্তর্বর্তী সরকার ম্যানুফেকচারিং বিপ্লব ঘটাতে চায় জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এবারের সফরের মূল ফোকাস থাকবে বড় কোম্পানির বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। চায়নিজ হেল্থ কেয়ারের সাথে কোলাবোরেশান চায় বাংলাদেশ। তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে যাতে তারা বাংলাদেশে এসে ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করে। চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চায় জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে বিনিয়োগসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বৈঠক ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর বিষয়ে অন্য যেসব দেশের আগ্রহ রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতে পারেই। আমরা সবসময় ভারসাম্য রক্ষা করে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করে থাকি।’ তবে কূটনীতিতে এর মানে এই নয় যে, এটি সবসময় ৫০-৫০ ভারসাম্য। কখনও কখনও এটি কোনও দেশের দিকে ৬০ ভাগ বা অন্য দেশের প্রতি ৪০ ভাগ হতে পারে। যেমন জাতিসংঘ রেজুলেশনের ক্ষেত্রে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, চীনের হাইনান প্রদেশে ২৫ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত বোয়াও (বিওএও) ফোরাম ফর এশিয়া কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরে বোয়াও ফোরাম কনফারেন্সে প্রধান উপদেষ্টা যোগ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উভয়পক্ষ রাজি হলে এবারের সফরে একাধিক চুক্তি সই হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

কালের আলো/এমএসএএকে/আরআই