জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বীরদের সম্মানে সেনাবাহিনীর ইফতার, আহতদের পাশে থাকার নিশ্চয়তা সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 10:24 pm | March 23, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নব ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে ‘নতুন বাংলাদেশ’। ৫ আগস্ট রচিত নতুন ইতিহাসের স্বাক্ষী গোটা বিশ্বও০। ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার আত্মাহুতি। এখনও শরীরে স্প্লিন্টার, গুলি নিয়ে হাসপাতালে বা ঘরে কাঁতরাচ্ছেন অগণিত শিক্ষার্থী। রক্তাক্ত জুলাইয়ে আহত এসব শিক্ষার্থীদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাদের অদম্য সাহস, দৃঢ়তা ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আয়োজিত ইফতারে দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহযোগিতাও।
গণঅভ্যুত্থানে অস্ত্র-বুলেটের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও সুন্দর একটি বাংলাদেশ। তাদের আত্মত্যাগ, সাহসিকতা ও বীরত্বের গল্প সবার মুখে মুখে। বেঁচে থাকা অনেকের কেউ পঙ্গু বা খোঁড়া হয়েছেন, কেউ চোখ-হাত-পা হারিয়েছেন। আবার কেউ কেউ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কিংবা নিজ বাড়িতে বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে পরিবারের বোঝা হয়ে আছেন।
কেউ কেউ ধারদেনা ও অন্যের সাহায্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের কারও কারও বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন শুকায়নি। শরীরে অসংখ্য রাবার বুলেটের ক্ষত। হাত-পা অচল হয়ে গেছে। অন্ধ কিংবা এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, অন্য চোখে ঝাপসা দেখেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তাদের। শুরু থেকেই আহত এমন ৪ হাজার ২১৫ জনকে দেশের বিভিন্ন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আহতদের পুনর্বাসনেরও মানবিক চিন্তা-ভাবনা করছে সেনাবাহিনী।
এমন বাস্তবতায় রোববার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা সেনানিবাসের সেনামালঞ্চে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের পাশে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। আন্দোলনে শহীদ, আহত ব্যক্তিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা ছিল তাঁর কণ্ঠে। তিনি মনোবল না হারানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা আহতদের সাথেই থাকবো। তাদের অনেকেই আহত, অনেকেই চলাফেরা করতে পারেন না, দেখতে পারেন না। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি তাদের পাশে আমরা থাকবো।’
জুলাই অভ্যুত্থান কেবল আত্মদানের বেদনার গল্প নয়। এটি গণমানুষের বিজয় ও সাহসের গল্প। গোটা জাতির মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য ও সম্মিলিত প্রত্যাশার প্রকাশ ঘটেছে এই আন্দোলনে। জুলাই অভ্যুত্থানের রক্ত আর অশ্রুমাখা দিনগুলো যেন ঢাকা সেনানিবাসের সেনামালঞ্চে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের সম্মানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইফতার ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে ফিরে আসে। শোক আর দু:খের সঙ্গে প্রত্যয়ের সাহসও জুগিয়েছে অনন্য এমন আয়োজন।
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ‘জাতির কৃতি সন্তান’ উল্লেখ করে সেনাপ্রধান ইফতার মাহফিলে আহতদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা কখনো মনোবল হারাবেন না। মনোবল হারানোর কিছু নেই। আপনারা জাতির কৃতি সন্তান। আপনারা দেশ ও জাতির জন্য অনেক ত্যাগ করেছেন। আপনাদের প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আহতদের জন্য ডিজিএফআই, এসএসএফ, ব্যাংকার ও সেনাবাহিনী টাকা দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে আহত ৪ হাজার ২১৫ জনকে দেশের বিভিন্ন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮৯ জন আহতের সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। এখনও ৩৯ জন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। আহতদের আর্থিক সহযোগিতা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জারি থাকবে।’
এছাড়াও অনুষ্ঠান শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেওয়া হয়। এর আগে সেনাপ্রধান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। ইফতার ও নৈশভোজে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) মোহাম্মদ ফয়জুর রহমানসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থী, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বেসামরিক পরিমণ্ডলের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে