সেনাবাহিনীকে নিয়ে হাসনাতের অপরিপক্ব গল্পে সারজিসের ‘দ্বিমত’, উন্মোচিত প্রকৃত সত্য
প্রকাশিতঃ 11:32 pm | March 23, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
বাংলাদেশের ইতিহাস পরম্পরায় এক নতুন সংযোজন ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া এক আন্দোলন ক্রমেই একটি গণজাগরণে রূপ নেয়। পতন ঘটে স্বৈরশাসনের। অভাবনীয় এই গণবিস্ফোরণে সামনের সারির সম্মুখ যোদ্ধা এবং জাতীয় বীর জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ। ‘রিফাইন্ড (সংশোধিত) আওয়ামী লীগ’ গঠনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে তিনি সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। এরপর থেকেই নানান কানাঘুষা ও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ছে না। ফেসবুকে সেনানিবাসে বৈঠক নিয়ে তাঁর স্ট্যাটাসকে ‘শিষ্টাচারবর্জিত’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। হাসনাতের সেই সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমও হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে এবার দ্বিমত পোষণ করেছেন। রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে দেওয়া তাঁর পোস্টটি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। সারজিস কিছু জায়গায় সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের কথা উল্লেখ করেছেন। এর আগেই অবশ্য হাসনাত দলীয় একটি কর্মসূচিতে সেনাবাহিনীর প্রতি নিজেদের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন।
এদিকে, সুইডেনভিত্তিক অনলাইন নিউজপোর্টাল নেত্র নিউজের কাছে হাসনাতের দাবির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সেনাবাহিনী সদর দপ্তর। শনিবার (২২ মার্চ) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে সেনাসদরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’। নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিষয়টি নিয়ে নেত্র নিউজ যোগাযোগ করলে একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় সেনাসদর। এছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ ক’দিন আগে তাঁর ফেসবুক পোস্টে ক্যান্টনমেন্ট থেকে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ তত্ত্ব হাজির করেছেন। শুরুতেই এ নিয়ে গুজবের ডালপালা মেলতে শুরু করলেও এর পেছনে কোন রহস্য লুকিয়ে ছিল এটি অনেকটাই পরিস্কার ছিল। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান’র নিষ্কলুষ জীবনেও কলঙ্ক লেপনের অপচেষ্টা হয়েছে। চটুল অনেক গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্য ও ইউটিউবের বয়ানে উত্থাপিত হচ্ছিল। এসব কথার সত্য-মিথ্যা নিয়ে অনেকের মনেই আবার ভীষণ আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। রীতিমতো তালগোল পাঁকানো এমন কর্মনৈপুণ্য তৈরি করে নানা প্রশ্নের। সবিনয়ে অনেকেই বলেছেন, হাসনাত সেনাবাহিনীর মতো একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়ে আদতে একতরফা-একপক্ষীয় বয়ান উপস্থাপন করেছেন। আদৌ সেনাবাহিনী প্রধান তাকে ডেকেছিলেন না তিনি এবং সারজিস স্বপ্রণোদিত হয়েই সেখানে গিয়েছিলেন এই প্রশ্নের জবাব মিলছিল না সহজেই।
তবে অনেকেই অনুমান করছিলেন, তাঁরা নিজের ইচ্ছাতেই সেদিন ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন। সারজিস নিজের পোস্টেও সেই কথা স্বীকার করেছেন। তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক ও দেশের সিনিয়র সাংবাদিক জিল্লুর রহমান হাসনাতের এই বিষয়টিকে অতিকথন হিসেবেই সজ্ঞায়িত করেছেন। হাসনাতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, আপনি সীমা লঙ্ঘন করেছেন। দেশটাকে একটি বিপর্যয়ের মধ্যে নিয়ে গেছেন, নিয়ে যাচ্ছেন। একটি আলোচনায় অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়। আপনি কি সব আলোচনা পাবলিক করেন? সার্বিক পরিস্থিতিকে তিনি দুর্ভাগ্যজনক হিসেবেও উল্লেখ করেন।
নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল (শনিবার) নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের এক বিবৃতিতে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে সেনানিবাসে খোদ সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেই ১১ মার্চ বৈঠকটি হয়েছিল। তবে হাসনাত আবদুল্লাহকে ‘ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগের’ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাঁর দলের আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিবেদনটিতে নেত্র নিউজ সেনাসদরের বিবৃতি উল্লেখ করে বলেছে, ‘হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীতে সারজিস আলম ১১ই মার্চ ২০২৫ তারিখে সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর প্রেক্ষিতে মিলিটারি এডভাইজার তাদেরকে সেনাসদরে আসার জন্য বলেন। অতঃপর ১১ই মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এর আগে যতগুলো রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, তার পেছনে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান সফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দিন। একইভাবে আত্মীয়তার বন্ধনকে গুরুত্ব না দিয়ে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়িয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে স্বার্থক মোড় দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ৫ আগস্টের পরিবর্তনে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা রাজনীতি বা বেসামরিক প্রশাসনে কোন নাক গলায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতায় সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বারবার বলেছেন, ক্ষমতায় আসার কোনো ইচ্ছা তাঁদের নেই। অন্তর্বর্তী সরকার যে সেনাবাহিনীর অব্যাহত সহযোগিতা পেয়ে আসছে এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড.মুহাম্মদ ইউনূসও স্বীকার করেছেন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠেই। এরপরও সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে নানা রকম প্রচারণা ও উসকানি দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে আসারও অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এসব দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ’র দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে তাঁরই রাজনৈতিক সহযোদ্ধা সারজিস আলম একমত হতে পারেননি। তিনি প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করে ফেসবুক পোস্টে এই সংক্রান্ত সংশোধনীর কথা জানিয়েছেন। হাসনাত আব্দুল্লাহর দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এ বিষয়ে কিছু জায়গায় সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের কথা উল্লেখ করেছেন। সারজিস রাখঢাক না করেই নিজেদের আত্মসমালোচনা করেছেন। তিনি ‘১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ নিয়ে আমার জায়গা থেকে কিছু সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন’ শিরোনামে একটি পোস্টে লিখেছেন- ‘সেদিন আমি এবং হাসনাত সেনাপ্রধানের সাথে গিয়ে কথা বলি। আমাদের সাথে আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ আরেকজন সদস্যেরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি যেতে পারেননি। প্রথমেই স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখি, সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি বরং সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারের সাথে যখন প্রয়োজন হতো তখন ম্যাসেজের মাধ্যমে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা ও উত্তর আদান-প্রদান হতো।’
‘যেদিন সেনাপ্রধান পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবসে অনেকটা কড়া ভাষায় বক্তব্য দিলেন এবং বললেন ‘এনাফ ইজ এনাফ’ তখন আমি সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইসরকে জিজ্ঞাসা করি আপনাদের দৃষ্টিতে অনাকাক্সিক্ষত কিছু দেখছেন কিনা? সেনাপ্রধানের বক্তব্য তুলনামূলক Straight-forward এবং Harsh মনে হচ্ছে। তিনি আমাকে বললেন, তোমরা কি এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চাও? আমি বললাম- বলা যেতে পারে। এরপরে সেদিন সেনাপ্রধানের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয় । সেনাভবনে সেই রুমে আমরা তিনজনই ছিলাম। সেনাপ্রধান, হাসনাত এবং আমি।’
‘মানুষ হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তির অভিমতকে একেকজন একেকভাবে অবজার্ভ করে। হাসনাত সেদিন তার জায়গা থেকে যেভাবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে অবজার্ভ ও রিসিভ করেছে এবং ফেসবুকে লিখেছে আমার সেক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিমত আছে।’ ‘আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের বক্তব্যকে সরাসরি ‘প্রস্তাব’ দেওয়ার আঙ্গিকে দেখি না বরং ‘সরাসরি অভিমত প্রকাশের’ মতো করে দেখি। ‘অভিমত প্রকাশ’ এবং ‘প্রস্তাব দেওয়া’ দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যদিও পূর্বের তুলনায় সেদিন সেনাপ্রধান অনেকটা স্ট্রেইট-ফরোয়ার্ড ভাষায় কথা বলছিলেন । পাশাপাশি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের জন্য ‘চাপ দেওয়ার’ যে বিষয়টি এসেছে সেখানে ‘চাপ দেওয়া হয়েছে’- এমনটি আমার মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে, সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।’
‘হাসনাতের বক্তব্যে যে টপিকগুলো এসেছিল, যেমন- ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, সাবের হোসেন, শিরিন শারমিন চৌধুরী, সোহেল তাজ; এসব নিয়ে কথা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কিনা, এই ইলেকশনে আওয়ামী লীগ থাকলে কী হবে, না থাকলে কী হবে, আওয়ামী লীগ এই ইলেকশন না করলে কবে ফিরে আসতে পারে কিংবা আদৌ আসবে কিনা- এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল। এসব সমীকরণে দেশের উপরে কী প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেসব নিয়ে কথা হয়েছিল।’
‘কিন্তু যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি মনে করি- কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোনো এক দিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ইলেকশনে অংশগ্রহণ করা যে প্রয়োজনীয়, সেই বিষয়ে সরাসরি অভিমত ছিল।’
হাসনাত তার বক্তব্যে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছে- আলোচনার এক পর্যায়ে বলি- যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই,সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দেবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর অ্যাটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি।’ ‘এই কনভারসেশনটা হয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু আমাদের রুমে বসে হওয়া কনভারসেশন হঠাৎ এককভাবে শেষ করে যখন সেনাপ্রধান উঠে দাঁড়ালেন এবং রুম থেকে কথা বলতে বলতে বের হয়ে এসে যখন আমরা গাড়িতে করে ফিরবো, তার পূর্বে বিদায় নেওয়ার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই কনভারসেশন হয়েছে। সেনাপ্রধান রেগে যাওয়ার সুরে এই কথা বলেছেন বলে আমার মনে হয়নি বরং বয়সে তুলনামূলক বেশ সিনিয়র কেউ জুনিয়রদেরকে যেভাবে অভিজ্ঞতার ভারের কথা ব্যক্ত করে, সেই টোন এবং এক্সপ্রেশনে বলেছেন।’
‘হাসনাত না ওয়াকার’- এই ন্যারেটিভ এবং স্লোগানকে আমি প্রত্যাশা করি না। হাসনাতের জায়গা ভিন্ন এবং সেনাপ্রধান জনাব ওয়াকার-উজ-জামানের জায়গাও ভিন্ন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল কিংবা জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোও কখনো প্রাসঙ্গিক নয়। পাশাপাশি সেনাপ্রধানের পদত্যাগ নিয়ে যে কথা দুয়েক জায়গায় আসছে সেটিও আমাদের বক্তব্য নয়।’
এসবের পাশাপাশি আমি আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে একটি অভিমত প্রকাশ করতে চাই। আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু এই মুহূর্তে আমার এটিই সঠিক মনে হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ না কেউ যোগাযোগ রক্ষা করে। সেই প্রাইভেসি তারা বজায় রাখে। আমাদের সাথে সেনাপ্রধানের যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে, সেগুলোর সাথে আমাদের সরাসরি দ্বিমত থাকলেও আমরা সেগুলো নিয়ে আমাদের দলের ফোরামে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারতাম, সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, সে অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারতাম। কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের বিরুদ্ধে এখনকার মতই রাজপথে নামতে পারতাম। অথবা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি আমাদের সাথে ঐক্যমতে না পৌঁছালে আমরা শুধুমাত্র আমাদের দলের পক্ষ থেকেই এই দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে পারতাম।’
‘কিন্তু যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে, এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।’ ‘আমার এই বক্তব্যে আমার সহযোদ্ধা হাসনাতের বক্তব্যের সাথে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত এসেছে। এটার জন্য অনেকে আমার সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যক্তিত্ব স্রোতে গা ভাসানোর মত কখনোই ছিল না। ছিল না বলেই আমরা হাসিনা রেজিমের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম।’
‘আজও কেউ হাসনাতের দিকে বন্দুক তাক করলে তার সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কমিটমেন্ট আমাদের আছে। কিন্তু সহযোদ্ধার কোনো বিষয় যখন নিজের জায়গা থেকে সংশোধন দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি, তখন সেটাও আমি করব। সেই বিবেকবোধটুকু ছিল বলেই ৬ জুন প্রথম যেদিন শহীদ মিনারে কয়েকজন কোটা প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়, তাদের মধ্যে সামনের সারিতে আমরা ছিলাম।’ ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের এই বিবেকবোধের জায়গাটুকুই আমাদেরকে সঠিক পথে রাখবে। আত্মসমালোচনা করার এই মানসিকতাই আমাদেরকে আমাদের কাক্সিক্ষত গন্তব্যে নিয়ে যাবে।’ ‘জুলাই গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটানো ‘আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। Truth shall prevail.
কালের আলো/আরআই/এমএসএএকে