৫০ বছরে যে কাজ হয়নি, খুব কম সময়ে সেটা হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিতঃ 4:05 pm | March 24, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ফেরি সার্ভিস চালু্ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এটিকে ‘মাইলফলক অর্জন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে যে কাজ হয়নি, খুব কম সময়ে সেটা হয়েছে। ফেরি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজনীয় সবকিছু আপনারা করবেন বলে আশা রাখি।
সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
এদিন সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া জেটিঘাটে ফেরি সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
এর আগে সোমবার সকালে উপদেষ্টাদের নিয়ে নির্ধারিত ফেরি ‘কপোতাক্ষ’ বঙ্গোপসাগরের আরেকপ্রান্ত সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া প্রান্তে যায়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সন্দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম উপকূলীয় দ্বীপ। কিন্তু স্বাধীনতার পর ঐতিহ্যবাহী এ জনপদের ভূখন্ডের সঙ্গে দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। কী লজ্জাকর, ৫০ বছর পার হয়ে গেল! একদিকে বিরাট শহর ও বন্দর সবকিছু চলছে, অন্যদিকে এখানে আসতে ও নিজের বাড়িতে যাওয়ার সময় মধ্যযুগীয় অবস্থায় আমাদের চলে যেতে হয়। এটা আমরা সহ্য করে যাচ্ছি, এটা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হচ্ছে না। আজ আমরা সে কলঙ্ক থেকে মুক্ত হলাম।’
তিনি বলেন, ‘এটা মাত্র শুরু হলো। এটা আরও সুন্দর ও নিরাপদ হবে। সন্দ্বীপ যাওয়ার কথা শুনলে মানুষ যেন ভয় না করে, যাওয়ার সময় মানুষ যেন মনে না করে- কী বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছি! এখন সন্দ্বীপে শুধু নিজেরা যাব না, বন্ধু-বান্ধব, বিদেশ থেকে যারা আসবে সবাইকে নিয়ে সেখানে যাব। ফুর্তি করব। রিসোর্ট হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সন্দ্বীপের লোক সারা আমেরিকা জুড়ে আছে। নিউইয়র্ক শহর তো তারা বন্দী করে রেখেছে। ওখান থেকে কেউ এলে অন্যজন বলতো- কোথায় যাচ্ছিস, সাবধানে থাকিস। এ রকম যেন আর না হয়। এখন তারা ওখানের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আসবে, তাদের দেখাবে- আমাদের বাড়ি কোথায়, দেশ কোথায়। বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে, চট্টগ্রাম শহরে যা পাওয়া যায় না, সন্দ্বীপে সেটা পাওয়া যায়। আপনাদের সে সুযোগ আছে। আপনারা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান, সেটার একটি ক্ষুদ্র অংশও সন্দ্বীপের উন্নয়নের জন্য খরচ করা হলে আপনারা অনেক এগিয়ে যাবেন। আপনাদের যাতায়াতের সুযোগটা করে দিলে সমস্ত কিছু হয়ে যেতে পারত।’
তিনি বলেন, ‘দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রা অনেক কঠিন। অনেক ঝড়-জঞ্জাটের মোকাবেলা করে আপনাদের টিকে থাকতে হয়। আমি এ এলাকারই মানুষ। আমি খুব কাছে থেকে আপনাদের জীবন দেখেছি। সরাসরি গাড়ি চলাচল করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় অনেক রোগী সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে রাস্তায় মারা যায়। কী দুঃখের কথা! যে আমরা এ সভ্য জগতে আছি, কিন্তু যাতায়াতের অভাবে আমরা একজন রোগীকে নিরাপদে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি।’
সন্দ্বীপ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেবে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘সন্দ্বীপকে নৌ-বন্দর ঘোষণা, কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট উম্মুক্ত, ঢাকা থেকে সরাসরি বাস চালু, ফেরিঘাট এলাকায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও নৌ-পথে নিয়মিত ড্রেজিং এর উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে। এসব ছোট ছোট উদ্যেগ সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমিয়ে আনবে। এভাবে ভারসাম্যপুর্ণ উন্নয়নের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সন্দ্বীপ এ অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেবে। কারণ আপনাদের বুদ্ধি-প্রবৃদ্ধি ও টাকার অভাব নেই।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
কালের আলো/এএএন