‘সহজ’ ও রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারির যোগসাজশে টিকিট কালোবাজারি
প্রকাশিতঃ 2:22 pm | March 25, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিট বিক্রয়কারী অনলাইন প্লাটফর্ম সহজ ডটকম ও রেলওয়ের আউটসোর্সিংয়ের অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশে ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে কয়েক ধাপের টানা অভিযানে চক্রের মূলহোতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের র্যাব। গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে তিন জনই রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী।
গ্রেপ্তাররা হলেন— চক্রের মূলহোতা উত্তম চন্দ্র দাস (৩৪), তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হাবীব আহমেদ (২৬), মো. ফারুক (৫৫), আব্দুল্লাহ আল মুমিন (৩০), প্রকাশ চন্দ্র রায় (৩৪), বাংলাদেশ রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. জুবায়ের (২৯), মো. সোহেল রানা (২১) ও চক্রের অন্যতম গ্রাহক কামরুজ্জামান (৩৫)। এসময় তাদের নিকট হতে ১২টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৩ লাখ ৩ হাজার ৪২ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গতকাল রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে র্যাব-১ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-অধিনায়ক লে. কমান্ডার মোহাম্মদ জাকিউল করিম বলেন, বিগত বছরগুলোতে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে অধিক সংখ্যক মানুষ ঘরে ফিরছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়।
এবার প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ রেলওয়ের শতভাগ টিকিট অনলাইন প্লাটফর্ম সহজ ডট কমের মাধ্যমে বিক্রয় করছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষ্যে ট্রেনের টিকিট ছাড়ার সাথে সাথে টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায়। র্যাব-১ এর একটি দল বর্ণিত অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন হতে টিকিট কালোবাজারি চক্রের শিকড়ের অনুসন্ধানে তৎপর হয়।
রেলওয়ে টিকিট কালোবাজারি চক্রের শিকড়ের খোঁজে র্যাব- অনুসন্ধান চালিয়ে টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ৮ জনকে রাজধানীর বিমানবন্দর এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
গ্রেপ্তার ও অভিযানের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, চক্রের সাথে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিতকরণ ও তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় ফাঁদ পাতা হয়। ওই ফাঁদে প্রথমে পা দেয় চক্রের মূলহোতা উত্তম চন্দ্র দাস (৩৪)। তিনি উত্তরার দক্ষিণখান কাওলার মোল্লাবাড়ির হরি দাসের ছেলে। তাকে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন এলাকা হতে একটি অনলাইন টিকিটের প্রিন্টেড কপিসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তার দেওয়া তথ্যমতে র্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল ঢাকার কাওলা হতে তারই ঘনিষ্ঠ সহযোগী হাবীব আহমেদ, ফারুক এবং রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী জুবায়েরকেকে তিনটি অনলাইন টিকিটের প্রিন্টেড কপিসহ আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে উত্তম চন্দ্র দাস জানায়, তিনি প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ৫০০-৭০০ রেলওয়ে টিকিট অবৈধ উপায়ে কালোবাজারে বিক্রি করতো। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার মতো অবৈধভাবে আয় করতেন বলে স্বীকার করেছেন। উল্লেখ্য উত্তম চন্দ্র দাস (৩৪) এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে পুলিশের একই অভিযোগে ৪টি মামলা রয়েছে।
পরে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর দল পুনরায় ফাঁদ পাতে। সে ফাঁদে পা দেয় স্বয়ং বাংলাদেশ রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী সোহেল রানা। তাকে ছয়টি অনলাইন টিকিটের প্রিন্টেড কপিসহ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে আটক করা হয়। এবার আটকদের সাথে নিয়ে র্যাব-১ এর অভিযানিক দলটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যায়।
আটকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা হতে রেলওয়ের অপর আউটসোর্সিং কর্মচারী আব্দুল্লাহ আল মুমিনসহ প্রকাশ চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। আটককৃতদের মোবাইল যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, তারা প্রত্যেকে টিকিট কালোবাজারির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত।
র্যাব- উপ-অধিনায়ক বলেন, আটক প্রকাশ চন্দ্র রায়ের সাথে অনলাইন প্লাটফর্ম সহজ ডট কমের কিছু অসাধু কর্মী টিকিট কালোবাজারির সাথে জড়িত আছে মর্মে স্বীকার করেছেন। আমরা বিষয়টি যাচাই বাছাই করছি।
অপর গ্রেপ্তার কামরুজ্জামান। তিনি চক্রের অন্যতম গ্রাহক। কামরুজ্জামান সাধারণত প্রতিমাসে ১০০-১৫০ এর অধিক টিকিট কালোবাজারি চক্র হতে ক্রয় করে থাকে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিষয়ে আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
কালের আলো/এসএকে