স্বাধীনতার আনন্দক্ষণ উদযাপন নৌবাহিনীর, জাহাজ ঘুরে তরুণ-যুবাদের জাগ্রত দেশাত্মবোধ
প্রকাশিতঃ 10:27 pm | March 26, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
একাত্তর দেখা হয়নি ওদের। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, সাহস ও স্মৃতি তাই নতুন প্রজন্মের কাছে বড় বেশি আবেগের। আবার দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী নৌবাহিনীর জাহাজ দেখতে কেমন এ নিয়েও বর্তমান প্রজন্মের কৌতূহলের শেষ নেই। বিস্ময় জাগানিয়া চোখে তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অবলোকন করলো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাতটি জাহাজ। বুধবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা, বরিশাল ও চাঁদপুরে এসব জাহাজ জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখে নৌবাহিনী। এই পরিদর্শনের সুযোগ হাতছাড়া না করতেই এসব স্থানে ভিড় করেন তরুণ-যুবকেরা। সঙ্গে ছিলেন তাদের অভিভাবকরাও। প্রত্যেকেই প্রকাশ করেন উচ্ছ্বাস। জাহাজ ঘুরে জাগ্রত করেন দেশাত্মবোধ।
সাগর নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই শিক্ষার্থীদের। সেই সাগরে কত ধরনের জাহাজ ভেসে বেড়ায়। তার মধ্যে ব্যতিক্রম যুদ্ধজাহাজ। অত্যাধুনিক সব যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে নৌবাহিনীর সদস্যরা কীভাবে সাগর পাড়ি দেন, কীভাবে বিশ্রাম নেন, কীভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইত্যাকার প্রশ্ন তরুণদের মনে। আবার শিশু-কিশোররা কার্টন, চলচ্চিত্র আর খবরে যে যুদ্ধজাহাজ দেখেন তার সঙ্গে মিল খুঁজছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এসব জাহাজের। সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে একেকটি দলে ভাগ হয়ে নানা বয়সী মানুষ জাহাজগুলো ঘুরে দেখেন। এ সময় জাহাজের সক্ষমতা, নাবিকদের জীবনযাত্রা ও দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা।
মুগ্ধতার কথা জানিয়ে একাধিক দর্শনার্থী বলেন, ‘প্রতি বছর বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আমাদের এই সুযোগ করে দেয়। এর মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মের মাঝে ভিন্ন অনুভূতির জোগান দিতে পারি। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের এই ভূখণ্ড পৃথিবীর শেষ দিন অবধি টিকে থাকুক স্বমহিমায়, এমন প্রত্যাশা আমাদের।’
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, দিবসটি উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম নেভাল জেটিতে বানৌজা সমুদ্র অভিযান, সদর ঘাট ঢাকায় বানৌজা চিত্রা, পাগলা নেভাল জেটি নারায়ণগঞ্জে বানৌজা অতন্দ্র, বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ টার্মিনাল খুলনায় বানৌজা অপরাজেয়, নেভাল বার্থ দিগরাজে বানৌজা ধলেশ্বরী, মেরিন ওয়ার্কশপ জেটি বরিশালে বানৌজা পদ্মা এবং বিআইডব্লিউটিএ ঘাট চাঁদপুরে বানৌজা শহীদ ফরিদ দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়। দিবসটি পালনের অংশ হিসেবে নৌ অঞ্চলসমূহে সকল জাহাজ ও ঘাঁটিতে পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামে অবস্থিত মেরিটাইম মিউজিয়াম সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় জাতির সূর্য সন্তানদের স্মরণ
বাঙালির গৌরবদীপ্ত মহান স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির জীবনে চিরস্মরণীয় ও অনন্যসাধারণ একটি দিন। বাঙালির জীবনে অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস গর্ব-অহংকারের দিনটিতে কৃতজ্ঞচিত্তে জাতির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্মরণ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ নিয়ে স্বাধীনতার আনন্দক্ষণ উদযাপনে যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দিনমান তাঁরা দিবসটি পালন করেছে। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করেছে আত্মদানকারী বীর শহীদদের।
৫৫তম মহান স্বাধীনতা দিবসটি যথাযথভাবে পালনে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান এর নির্দেশে বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বিভিন্ন নৌ অঞ্চলসমূহের মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত, দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ অঞ্চলের সকল জাহাজ ও ঘাঁটিসমূহে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ, নেভি এ্যাংকরেজ স্কুল এন্ড কলেজ, শিশু নিকেতনে যথাক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং মোংলায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, কুচকাওয়াজ এবং আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন পর্যায়ে বিজয়ী প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পরিচালিত বিশেষায়িত স্কুল ‘আশার আলোর’ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এর আগে প্রত্যুষে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিনটিতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির বীর সন্তানদের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস পৃথকভাবে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে