শবে কদরে অন্তত ৪ আমল ছেড়ে দেবেন না
প্রকাশিতঃ 9:37 pm | March 27, 2025

ধর্ম ডেস্ক, কালের আলো:
পবিত্র রমজানের একটি রাতের নাম লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। এর চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কোনো রাত নেই। এই রাতকে পবিত্র কোরআনে ‘হাজার মাসের চেয়ে উত্তম’ বলা হয়েছে। লাইলাতুন বা শব অর্থ রাত। কদর অর্থ পরিমাপ, নির্ধারণ, ভাগ্য নিরূপণ, সম্মান, গৌরব, মর্যাদা ও মহিমা ইত্যাদি। লাইলাতুল কদর বা ‘শবে কদর’ অর্থ সম্মানিত, মর্যাদাপূর্ণ, মহিমান্বিত ও ভাগ্যনির্ধারণী রজনী।
এই রাতের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (সুরা কদর: ১-৫)
হাজার মাসের চেয়ে উত্তম অর্থ শুধু যে একহাজার মাসের চেয়ে উত্তম-বিষয়টি এমন নয়, বরং অনেক বেশি বোঝাতেও হাজার শব্দটা ব্যবহার করা হয়। তারপরও আমরা যদি এখানে শুধু এক হাজার মাসই ধরি এর সময় দাঁড়ায় ৮৩ বছর ৪ মাস। তার মানে ৮৩ বছর ৪ মাস পর্যন্ত ইবাদত করার যে ফজিলত বা সওয়াব পাওয়া যায় তা এ এক রাতের ইবাদতের দ্বারাই মহান আল্লাহ প্রদান করে থাকেন।
মহিমান্বিত এই রাত ইবাদত বন্দেগিতে কাটানোর শিক্ষা রয়েছে হাদিসে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে— ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে (ঈমানসহ) এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় এ রাতে জেগে ইবাদত বন্দেগি করবে, তার পূর্ববর্তী জীবনের সব পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’
এই রাতে তাওবা-ইস্তেগফার, নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দরুদ, দান-সদকাসহ যেকোনো নফল আমলের সওয়াব অনেকগুণ বেশি। বিশেষ করে চারটি আমল যেন মিস না যায়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা কাম্য। আমলগুলো হলো-
১. মাগরিব ও এশার নামাজ জামাতে আদায় করা
লাইলাতুল কদরে মাগরিব ও এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা উচিত। তাহলে হাদিস অনুযায়ী শবে কদরের ফজিলত লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম: ৬৫৬)
২ শবে কদরে বিশেষ দোয়া পড়া
হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, ‘তুমি বলো, ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী’ (আরবি উচ্চারণ দেখে পড়বেন)। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনার পছন্দ। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩)। সুতরাং সারাদিন-রাত বেশি বেশি এই দোয়া করবেন। এই দোয়াটি হাঁটা-চলা-শোয়া অবস্থায় করা যায়। শেষ দশকে বেশি বেশি পড়া উচিত।
৩ পরিচ্ছন্ন হওয়ার বিশেষ গুরুত্ব
লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের প্রধান শর্ত হলো ভেতর ও বাইরের পবিত্রতা লাভ এবং একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি বলেন— ‘উত্তম হলো- যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, তাতে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল-সুগন্ধি-উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা। আর বাহ্যিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি না মানুষের ভেতরটা সুন্দর হয়। মানুষের ভেতর সুন্দর হয় তওবা ও আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৮৯)
৪. তাহাজ্জুদ পড়া
তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত সবসময় বেশি। কিন্তু শবে কদরে এই নামাজের মূল্য অনেক বেশি। শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন প্রভুর ভয় ও ভালোবাসায় যারা নিদ্রা ত্যাগ করেন, তাদের প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে’ (সুরা সাজদা: ১৬)
মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম: ১১৬৩)
উল্লেখ্য, লাইলাতুল কদরের বিশেষ কোনো নামাজ কিংবা পদ্ধতি নেই। কদরের নামাজে বিশেষ সুরা পড়তে হবে-এমন কথা লোকমুখে প্রচলিত আছে, তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। নামাজের আলাদা কোনো দোয়া বা মোনাজাত নেই। অনেকে তিন বার করে সুরা পড়েন। এসব বিশুদ্ধ পদ্ধতি নয়, জরুরি বা বাধ্যতামূলকও নয়। নিজের মতো করে দোয়া করবেন, নামাজে সুরা কেরাত পড়বেন অন্য সময়ের নফল নামাজের মতো।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শবে কদরের মহামূল্যবান রাতে বেশি বেশি নেক আমলের তাওফিক দান করুন। অন্তত উল্লেখিত চার আমল যেন বাদ না যায়, সেই তাওফিক দান করুন। লাইলাতুল কদর নসিব করে আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।
কালের আলো/এমডিএইচ