শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমার-থাইল্যান্ডে ধ্বংসস্তূপ, জরুরি অবস্থা জারি
প্রকাশিতঃ 5:43 pm | March 28, 2025

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ব্যাপক হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশ দুটিতে ভবন ধসের পাশাপাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক ভবন। ফাটল ধরেছে নানান অবকাঠামো ও সড়কে। ব্যাংককে অন্তত ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংকক শহরকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে সামরিক-শাসিত সরকার মিয়ানমারের ছয়টি অঞ্চল এবং রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ভূমিকম্পের পর ব্যাংককে উদ্ধার অভিযান চলছে
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিয়ানমারের মান্দালয়ে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর–উত্তরপশ্চিমে ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে। কয়েক মিনিট পর একই এলাকায় ৬ দশমিক ৪ তীব্রতার একটি আফটারশক অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোর বিভিন্ন সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। দেশটি থেকে এএফপির সাংবাদিকরা জানান, নেপিডোতে ভূমিকম্পের সময় বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে অংশবিশেষ খসে পড়েছে। নেপিডো শহরে ২০ লেন পর্যন্ত প্রশস্ত রাস্তা আছে। ভূমিকম্পের কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কে ফাটল তৈরি হয়েছে।
দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সাগাইং অঞ্চলে ৯০ বছরের পুরনো একটি সেতু ভেঙে পড়েছে এবং বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনকে সংযুক্তকারী মহাসড়কের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিছু কাঠামো মাটিতে ধসে পড়েছে। প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বাড়িঘরের ক্ষতির ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
তবে, দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে আরও বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায়, ছয়টি অঞ্চল এবং রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে জান্তা সরকার।
মিয়ানমারের ভূমিকম্পে কেঁপেছে প্রতিবেশি বাংলাদেশও। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭। শুক্রবার দুপুরে ১২টা ২৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভারতের পশ্চিবঙ্গের কলকাতা, মনিপুর রাজ্য ও ইম্ফলেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে দেশটি থেকে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া বেইজিংয়ের ভূমিকম্পবিষয়ক সংস্থা বলছে, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনান প্রদেশেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। এ কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৯।
ভূমিকম্পের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকক। শহরটিতে একটি বহুতল ভবন ধসে অন্তত ৪৩ শ্রমিকের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত এখান থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বাং সু জেলার উপ-পুলিশ প্রধান ওরাপাত সুকথাই এএফপিকে বলেন, ‘আমরা অনুমান করছি যে শত শত মানুষ আহত হয়েছে। তবে আমরা এখনও হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারিনি।’
ভূমিকম্পের পর থাইল্যান্ডের স্টক এক্সচেঞ্জ সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিছু মেট্রো এবং হালকা রেল লাইন স্থগিত করা হয়েছে।
১ কোটি ৭০ লাখের বেশি লোকের বাসস্থান, বৃহত্তর ব্যাংকক মহানগর এলাকায় বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা গেছে, যেখানে বহুতল কনডোমিনিয়াম এবং হোটেলের বাসিন্দারা পালানোর জন্য সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছেন। ভূমিকম্পের পরের উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে অনেকেই বিকেলের রোদ থেকে রক্ষা পেতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়নের জন্য থাই প্রধানমন্ত্রী পায়োংটার্ন সিনাওয়াত্রা একটি জরুরি সভা ডেকেছেন।
কালের আলো/এএএন