পেশাজীবীদের উচিত জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটে জনসেবায় মনোযোগ দেওয়া

প্রকাশিতঃ 1:06 pm | March 30, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

 

পেশাজীবীদের জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে ধারণ করে জনসেবায় মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী।

তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন করার লক্ষ্যে। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য দীর্ঘ ৫৩ বছরেও জনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তব রূপ লাভ করেনি। সেই ব্যর্থতা মুছে দিতেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আবার ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছে, অকাতরে জীবন দিয়েছে। তাদের স্বপ্ন গুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। সামনে এমন সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে যারা জুলাই শহীদদের ধারণ করবে, যে সরকার শহীদদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করবে।

শনিবার (২৯ মার্চ) এবি পার্টির পেশাজীবী কাউন্সিলের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পেশাজীবী কাউন্সিলের আহ্বায়ক প্রফেসর ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মাহবুব শামীমের সঞ্চালনায় ‘২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ও পেশাজীবীদের দায়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. সাহাব এনাম খান, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান নোমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. দিলারা চৌধুরী আরও বলেন, ব্রিটিশ থেকে শুরু করে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত সব গণ-আন্দোলনে পেশাজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাইলে আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখতে হবে। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

এছাড়া তিনি পেশাজীবীদের প্রেসার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাহাব এনাম খান বলেন, রাজনৈতিক প্রোগ্রেসে বারবার আমরা হোঁচট খাচ্ছি, এর অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। তথ্য সন্ত্রাস আমাদের অন্যতম শত্রু। গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কত ধরনের প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে যা আপনারা সবাই দেখেছেন। আমাদের মৌলবাদী ট্যাগ দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের নতুন এই বাংলাদেশে প্রোপাগান্ডা রোধে পেশাজীবীদের গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে।

ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপনাদের সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে পেশাজীবীদের নামে যে রাজনীতি চলছে এটা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক। পেশাজীবী রাজনীতির নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের রাজনীতি আমরা করতে দিতে পারি না। আমরা চাই বিভিন্ন পেশার মানুষের দাবি দাওয়া আকাঙ্ক্ষা যেন আপনাদের মাধ্যমে উঠে আসে। সব সেক্টরের সমস্যা শুনে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, পেশাদারিত্বের জায়গায় সিরিয়াস হতে হবে। বাংলাদেশ ২.০ গঠনে পেশাজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ওমর ফারুক বলেন, ইতালিতে যে ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছিল, জার্মানিতে নাৎসিবাদ চেপে বসেছিল তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ বছর ধরে আমাদের দেশেও ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছিল। আমরা সেই ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সন্তানেরা সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা ২৪ গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পাই।

তিনি বলেন, আমরা এবি পার্টি সেই শুরু থেকেই নতুন রাজনীতি বন্দোবস্তের কথা বলছি, এখন আমাদের মধ্যে সেই সুবর্ণ সুযোগটি এসেছে। আমরা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে চাই। এ জন্য পেশাজীবী কাউন্সিলের দায় অনেক, আগামী বাংলাদেশ পূর্ণ গঠনে পেশাজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে পেশাজীবী কাউন্সিলের নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- পেশাজীবী কাউন্সিলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সামসুল আলম খান, ইউসিবি ব্যাংকের ডিরেক্টর ওবায়দুর রহমান এফসিএ, যুগ্ম সদস্য সচিব তানভীর ইউসুফ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ও বুয়েট শিক্ষার্থী শহীদ ফারদিনের পিতা সাংবাদিক নুর উদ্দিন।

কালের আলো/এএএন