ফাঁকা বন্দরনগরী, পুলিশ-র্যাবের টহল জোরদার
প্রকাশিতঃ 4:15 pm | March 30, 2025

চট্টগ্রাম প্রতিবেদক কালের আলো:
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে টানা নয়দিনের চলমান ছুটির মধ্যে চট্টগ্রাম নগরী ছেড়ে গেছেন কয়েক লাখ বাসিন্দা। এর ফলে নগরী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। সড়কে যানবাহনও কমে গেছে। ফাঁকা নগরীতে ছিনতাইসহ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ ও র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে।
ঈদের টানা ছুটিতে নগরীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে বাসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরি ঠেকাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে নগরবাসীর জন্য একগুচ্ছ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৩০ মার্চ) শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে সোমবার (৩১ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। সরকারিভাবে রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার (৩০ মার্চ, ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল) তিনদিন ঈদের ছুটি। এর সঙ্গে বুধবার (২ এপ্রিল) ও বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সরকার নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করেছে। শুক্র-শনিবার মিলিয়ে টানা নয়দিনের বন্ধ শেষে চট্টগ্রাম নগরী আগামী ৬ এপ্রিল আবার ব্যস্ততায় ফিরতে পারে।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের সরকারি বন্ধ ছিল। পরদিন ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) একদিন খোলার দিন গেছে। শুক্র-শনিবার (২৮ ও ২৯ মার্চ) আবারও সাপ্তাহিক বন্ধ। শনিবার বেসরকারিভাবে খোলার দিন হলেও কর্মজীবীদের অনেকেই বৃহস্পতিবার ও শনিবার ছুটি নিয়ে চট্টগ্রাম শহর ছাড়তে শুরু করেন। এর ফলে চট্টগ্রামে এবার ঈদযাত্রাটা বলতে গেলে শুরু হয়েছে ২৬ মার্চের সকাল থেকেই। তবে চট্টগ্রাম নগরীর আশপাশের উপজেলা ও জেলার বাসিন্দারা শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে শহর ছাড়েন।
এর ফলে রোববার (৩০ মার্চ) নগরী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। নগরীর চিরচেনা যানজট পরিস্থিতি নেই। সড়কে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনও কম দেখা যাচ্ছে।
অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যাওয়া নগরীতে পুলিশের নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত টহল ও সাদা পোশাকের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা।
এ অবস্থায় নগরবাসীর জন্য দেয়া সিএমপির নির্দেশনায় বাসা বাড়ির দরজায় ‘অধিক নিরাপত্তা সম্পন্ন’ অতিরিক্ত তালার ব্যবহার, ফাঁকা বাসায় নগদ টাকা ও স্বর্নালঙ্কার রেখে না যাওয়া ও ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন- সিসি টিভি ক্যামেরা ও এলার্ম সিস্টেম স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আবাসিক এলাকাগুলোতে রাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা ও নতুন নিয়োগ করা নিরাপত্তাকর্মীদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ছবি সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবাসিক এলাকাগুলোতে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির ঘোরাফেরা দেখলে কাছের থানায় অবহিত করতে এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ নম্বরে এবং নগর পুলিশের কন্ট্রোল হটলাইন নম্বর ০১৩২০০৫৭৯৯৮ ও ০১৩২০০৫৪৩৮৪ নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নগরীতে মোট ১৬৩টি আবাসিক এলাকার তালিকা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কোতোয়ালী থানা এলাকায় ১৩টি, বাকলিয়ায় ৫টি, চকবাজারে ৮টি, সদরঘাটে ৪টি, চান্দগাঁওয়ে ৮টি, পাঁচলাইশে ২৮টি, খুলশীতে ২০টি, বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায় ১২টি, ডবলমুরিংয়ে ১০টি, হালিশহরে ১৭টি, পাহাড়তলীতে ৭টি, আকবর শাহ থানা এলাকায় ১৬টি, বন্দরে ৩টি, ইপিজেড এলাকায় ২টি, পতেঙ্গায় ৭টি এবং কর্ণফুলীতে ৩টি।
আবাসিক এলাকার পাশাপাশি ব্যাংকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য পরামর্শ দিয়েছে সিএমপি। এতে ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা যাতে সতকর্তার সাথে দায়িত্ব পালন করে, সেটির তদারকি করা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির জন্য একজন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের নিজস্ব সিসি ক্যামেরাগুলো কাজ করছে কিনা সেগুলোর নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভল্টের চারদিকে সিসি ক্যামেরার কভারেজ নিশ্চিত করতে বলেছে সিএমপি।
যারা পরিবার নিয়ে শহর ছাড়বেন তাদের সংশ্লিষ্ট বিট অফিসার ও থানাকে অবহিত করতেও বলা হয়েছে সিএমপির নির্দেশনায়।
এদিকে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে শনিবার (২৯ মার্চ) থেকে নগরীজুড়ে নিরাপত্তা টহল শুরু করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
র্যাব-৭ এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনো ধরনের ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধ এবং মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টিসহ অপরাধী চক্রের তৎপরতা রোধে র্যাব সতর্ক অবস্থায় থেকে টহল দিচ্ছে। বাসা-বাড়ি এবং মার্কেট ফাঁকা থাকার কারণে কেউ যেন কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সুযোগ না পায়, সেজন্য র্যাবের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়াও ঈদ পরবর্তী বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, চিড়িয়াখানায় ঘুরতে গিয়ে কেউ যেন কোনও ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাব-৭ এর পর্যাপ্ত রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এ আর এম মোজাফফর হোসেন জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে র্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা কার্যক্রম চলমান থাকবে। যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে র্যাব।
কালের আলো/এএএন