পর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার, ঈদে ৮০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা

প্রকাশিতঃ 7:41 pm | March 30, 2025

কক্সবাজার প্রতিবেদক, কালের আলো:

 

পুরো রমজানজুড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছিল পর্যটক শূন্য। পর্যটক না আসায় এই এক মাস বেচাবিক্রি অনেকটা বন্ধ ছিল কক্সবাজারে। এ সময় অলস সময় অতিবাহিত করেছেন আবাসিক হোটেল কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সৈকত নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

রোজা শেষে আগামীকাল ঈদ উদযাপন করবে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। আর ঈদের এই ছুটিতে পর্যটকদের পদভাবে কক্সবাজার প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের আশা, ঈদের এই ছুটিতে অন্তত ৬-৭ লাখ পর্যটক আগমন ঘটবে কক্সবাজারে। এতে প্রায় ৮০০ত কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। এবার ঈদে সাপ্তাহিক ছুটিসহ ৯ দিনের ছুটি চলছে। তবে শুরুতে তেমন পর্যটকের চাপ না থাকলেও ৩১ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় থাকবে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের সাড়ে ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টের কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে।

গত শনিবার পর্যন্ত তারকা মানের অনেক হোটেলের রুম বুকিং হয়েছে শতভাগ। অন্যান্য আবাসিক প্রতিষ্ঠানেও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বুকিংয়ের তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের ধারণা, যেহেতু রমজানে পর্যটক ভ্রমণে তেমন উৎসাহ বা সুযোগ হয়নি তাই বন্ধের দিনে অন্তত ৬-৭ লাখ পর্যটক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসব পর্যটকদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে হোটেল মোটেল রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বার্মিজ পণ্যের দোকান সবখানে শেষ হয়েছে মেরামত কিংবা সাজ-সজ্জার কাজ।

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটিতে বিপুল পর্যটক থাকবে। আরও দুদিন আগে অধিকাংশ হোটেলের কক্ষ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে।’

পর্যটক বাড়লে কিছু ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রতি হোটেলের কক্ষ ভাড়ার তালিকা টাঙানো থাকে। পর্যটকেরা তালিকা দেখে কক্ষ ভাড়া পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া থাকে। অনলাইনেও অধিকাংশ হোটেলের কক্ষ ভাড়া অগ্রিম বুকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

হোটেল ওশান প্যারাডাইসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদের মিশু বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যটকদের বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কক্ষ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি ঈদের পরবর্তী সপ্তাহখানেক পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকে ভরপুর থাকবে।

হোটেল কক্স-টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, হোটেলে মেরামতের কাজ থেকে শুরু করে সুইমিং পুল পরিষ্কার এবং রুমগুলোতে রংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন পুরোপুরি প্রস্তুত পর্যটকদের স্বাগত জানাতে। রুম বুকিংও হচ্ছে।

সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের ব্যবসায়ী কামরুল হাসান  বলেন, রমজানে পর্যটক না থাকায় দোকানের মেরামতের কাজ করেছি। এখন নতুন নতুন পণ্য যেমন আচার, বাচ্চাদের খেলনা, জুতা, কাপড় এগুলো সাজানোর কাজ করছি। আশা করি এবার ঈদে ভালো ব্যবসা হবে।

শুটকি দোকানের ব্যবসায়ী গফুর উদ্দিন বলেন, প্রচুর পরিমাণ লইট্টা, ছুরিসহ ১০ ধরনের শুটকি দোকানে তুলেছি। ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা কক্সবাজার আসলে এসব শুটকি করবে, এজন্য শুটকিগুলো প্যাকেটজাত করছি।

সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, রমজানে কক্সবাজারে পর্যটক শূন্য ছিল। এ সুযোগে লাইফ গার্ড কর্মীরা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেদের ট্রেনিং কার্যক্রমও চালিয়েছে। এখন ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের সেবা দিতে সবাই প্রস্তুত।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটিতে ৭ থেকে ৮ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ এবং যানবাহনে যাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করা হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ জানান তিনি।

আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৩টি খাতে অন্তত ৮ শত কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চুরি-ছিনতাই রোধে শহরে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি যানজট নিরসন এবং পর্যটকের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্রস্তুত পুলিশ।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজার পর্যটকের ভ্রমণ সব সময় নিরাপদ করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ঈদে অতিরিক্ত পর্যটক আসবে। তাদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ টহল জোরদার, সাদা পোশাকে নজরদারি। বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ বক্স স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা নিরাপদে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া আদায় এবং রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম যেন বাড়ানো না হয়, সেসব তদারকির জন্য একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হবে। পর্যটক হয়রানি এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালের আলো/এএএন